মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ফিনল্যান্ড চীনের মোবাইল ফোন তৈরি হয় গুলিস্তানে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলিস্তানেই তৈরি হতো নকল মোবাইল ফোন সেট। গায়ে লেখা হতো মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাম। শুধু তাই নয়, পরিবর্তন করা হতো চোরাই দামি ফোনের ‘আইএমইআই’ (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর। সরকারি সংস্থার কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকলেও দিনে ৫০টি মোবাইল ফোন সেট তৈরি হতো এ কারখানায়। কারখানার মালিক মো. স্বপনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্নভাবে মোবাইলের যন্ত্রাংশ এনে সেট তৈরি ও নকল আইএমইআই দেওয়া হতো। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক ও অপরাধীদের হাতে চলে যেত এসব মোবাইল ফোন সেট। শেষ রক্ষা হয়নি। রবিবার রাতে কারখানা থেকেই স্বপনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগিতায় র‌্যাবের অভিযানে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মোবাইল ফোন সেট, ৩ হাজার ৩৭০টি নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেডফোন, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল চার্জার ১ হাজার ১৫৫টি, সেলার মেশিন, হিট গান, মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে ৪৩টি, ইলেকট্রিক সেন্সর ১০টি, আইএমইআই কাটার মেশিন ১৩টি, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড জব্দ করা হয়।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, একটি বেসরকারি অফিসের পিয়নের কাজ করা স্বপনের ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তিগত দিকে আগ্রহ ছিল। একজনের মোবাইল ফোন মেরামতের সূত্রে গুলিস্তান এলাকার এক মেকানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সেই মেকানিকের মাধ্যমে স্বপন জানতে পারেন মোবাইল ফোন মেরামতের ব্যবসাটি লাভজনক। তখন তিনি বিনা বেতনে একটি সার্ভিসিং সেন্টারে মেকানিকের কাজ শিখেন। পরবর্তী সময়ে স্বপন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওপর বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে জানার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখেন। একপর্যায়ে স্বপন নিজেই ভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মোবাইল ফোন সেট তৈরি ও ‘আইএমইআই’ নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, স্বপন প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারেন। তার কারখানায় আরও কয়েজকজন সহকর্মী রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। স্বপনের কারখানায় তৈরি এ সেটগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিতেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব সেট বিটিআরসির ডাটাবেজে নিবন্ধিত না থাকায় বিক্রির পর কোনো না কোনো সমস্যার কারণে গ্রাহক অভিযোগ করতেন। বারবার মোবাইল নষ্ট হওয়ায় গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হতেন। তখন মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি ফেরত দিতে আসতেন গ্রাহকরা। তখন ওইগুলো পুনরায় মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতেন তিনি।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, স্বপনের কারখানায় তৈরি ১০ হাজার মোবাইল ফোন সেট দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়েছে। এই মোবাইল সেট বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন। এসব নকল মোবাইল দিয়ে কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করা যেত। মোবাইল কোনো অপরাধ চক্র অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা জানতে তদন্ত করছে র‌্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর