সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

জরুরি বিভাগ আছে সেবা নেই

রাজশাহী মেডিকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

জরুরি বিভাগ আছে সেবা নেই

গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থাকলেও সেখানে কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের জরুরি চিকিৎসা না দিয়েই পাঠানো হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এতে তাৎক্ষণিক সেবা না পেয়ে রোগীর জটিলতা বাড়ে, এমনকি অনেকের মৃত্যুও হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর নাম-ঠিকানা রেজিস্টার আর কোন ওয়ার্ডে যাবে সেটি ঠিক করে দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকলেও সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।

রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকার জাহিদুজ্জামান চলতি মাসের শুরুর দিকে তার স্ট্রোক করা মাকে নিয়ে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। সেখানে টিকিট কেটে খাতায় নাম এন্ট্রি করে প্রায় ২০ মিনিট পর মাকে নিয়ে পৌঁছান ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর রিপোর্ট নিয়ে যান ওয়ার্ড চিকিৎসকের কাছে। সেখানেও লম্বা লাইন। মিনিট বিশেক পর সিরিয়াল পান চিকিৎসকের। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাইরে থেকে ওষুধপত্র আনাসহ নানা প্রক্রিয়া শেষে ঘণ্টা দুয়েক পর তার মায়ের চিকিৎসা শুরু হয়। অথচ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা মিললে চিকিৎসা আরও আগে শুরু করা যেত। শুধু জাহিদুজ্জামানের মা নন, এভাবে প্রত্যেক রোগীকেই হাসপাতালে যাওয়ার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসা পেতে।

দুর্গাপুর উপজেলার সায়বাড় গ্রামের বাসিন্দা জনাব আলীর স্বজনরা জানান, জনাব আলী ডায়াবেটিস রোগী। রক্তচাপ কমে যাওয়ায় ২২ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগে নাম-ঠিকানা এন্ট্রি শেষে তাকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিতে বলা হয়। রোগীকে ট্রলিতে তুলে ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। মাঝপথে রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাই আবারও জরুরি বিভাগের দিকে ট্রলি ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর সময়ই তিনি মারা যান। এমনকি জরুরি বিভাগে ইসিজি করার ব্যবস্থা না থাকায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করতে পারেননি নার্স। ইসিজি করতে পাঠানো হয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। পরে জনাব আলীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয় বেলা ১১টা ৫ মিনিটে। একইভাবে ১৫ জুন নাটোরের সিংড়ার বাসিন্দা বেলালুজ্জামানকে নেওয়া হয় রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় ৩৬ মিনিট পর। এরপর চিকিৎসা শুরু হতে না হতেই তিনি মারা যান। এভাবে অনেক রোগীই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যাচ্ছেন। জরুরি সেবা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীদের জরুরি সেবা দিতে না পারার বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন। জরুরি বিভাগকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এটির বাস্তবায়ন হলে এ বিভাগেই মিলবে সব ধরনের চিকিৎসা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, বর্তমানে জরুরি বিভাগ থেকে রোগীদের তাড়াতাড়িই পাঠানো হচ্ছে। তবে রোগীদের ওয়ার্ডে যেতে যেতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মতো সময় লেগে যায়। এই সময়টা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘১০ মিনিটের মধ্যে রোগী ম্যানেজ করতে পারলে এক ধরনের রেজাল্ট আসে, আবার ১০ মিনিট পর ম্যানেজ করলে আরেক ধরনের রেজাল্ট পাওয়া যায়।’

পরিচালক বলেন, ‘আমাদের জরুরি বিভাগের ভবনে বর্তমানে ওয়ানস্টপ সেবা, পুলিশ বক্স, ডিএনএসহ নানা বিভাগ ঢুকে পড়েছে। এগুলো এখান থেকে সরিয়ে ভবনটি জরুরি সেবার জন্য ছেড়ে দিতে হবে। তবে ওই বিভাগগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওই বিভাগগুলোর জন্য আমরা জায়গা দিয়েছি। এখন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে বিভাগগুলো স্থানান্তর করতে পারলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর