মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

‘গ্যাং কালচার’ ভয়ানক খুলনায়!

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

‘গ্যাং কালচার’ ভয়ানক খুলনায়!

কলেজ ক্যাম্পাসে বিরোধের জের ধরে খুলনার রেলস্টেশন ঘাট এলাকায় দুই কলেজ ছাত্রকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, আহত আরিফুল ইসলাম ও মো. তপু খুলনার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বিরোধের জের ধরে ১৪ আগস্ট রাতে তাদের দুজনকে ফোন করে ঘাট এলাকায় নেওয়া হয়। সেখানে তাদের পেট, বুক, ঘাড় ও পুরুষাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এর আগে ১ এপ্রিল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে মেয়েদেরকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ফুলতলায় এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র আলিফ রোহানকে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় তার পিতা সৈয়দ আবু তাহের বাদী হয়ে কিশোর গ্যাং শান্ত-হাসনাত-তাছিন গ্রুপের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর-তরুণরা অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন নিষিদ্ধ গেমে আসক্ত হচ্ছে। কয়েকজন একত্রিত হয়ে অপরাধ ঘটানোর পেছনের কৌশল তারা শিখছে গেম থেকেই। যৌনচাহিদা ও বিকৃতি ভর করেছে অনলাইন গেমের মাধ্যমে। ফলে পাড়া-মহল্লায় গ্যাং তৈরি করে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, মাদক ও হত্যার মতো ঘটনায়। খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইলে আইএমই পরিবর্তন অপরাধে যুক্ত হওয়া ও মোবাইলের মাধ্যমে জুয়াখেলাসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা আগ্রহ নিয়ে জড়াচ্ছে। এই অনলাইন ভিত্তিক আসক্তি একসময় তাদের বাস্তবক্ষেত্রে অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও উৎসাহিত করছে। এদিকে ১৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার সমাজের জন্য শঙ্কার বিষয় হয়ে উঠেছে। অন্যান্য অপরাধের তুলনায় মাদক এবং নারী-শিশু নির্যাতন সংশ্লিষ্ট অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। জনপ্রতিনিধি শিক্ষক এনজিও প্রতিনিধি প্রশাসনের ব্যক্তিদের নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। জানা যায়, জুলাই মাসে খুলনায় পাঁচটি ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৩টিসহ ৩০৭টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মাদক উদ্ধারে ২২৮টি অভিযান, মেট্রোপলিটন পুলিশ ২৫৮টি অভিযান ও জেলা পুলিশ ১৭১টি অভিযান চালিয়ে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর-তরুণরা পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ এই বয়সে আচরণ পরিবর্তিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘বড় হয়েছি ডোন্ট কেয়ার’ ভাব চলে আসে। এ ছাড়া সমাজের নানা অসঙ্গতি অস্বাভাবিকতায় খেই হারিয়ে ফেলছে সমাজের উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর