বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

হাসপাতালে করোনার চেয়ে আড়াই গুণ ডেঙ্গু রোগী

শামীম আহমেদ

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও খারাপ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু না হলেও ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন একজন। সারা দেশের হাসপাতালে গতকাল করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন ১৯৬ জন আর ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন ৪২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন ৩৬১ ডেঙ্গু রোগী। ৮৫ ভাগের বেশি ডেঙ্গু রোগীই ঢাকায়। বর্ষাকালের শুরু থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসতে শুরু করেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রকোপ বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিদিনই হাসপাতালে শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ১২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। ১০০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃত্যু হয়েছে একজনের। গত এক দিনে শতাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯৩ জন।

অন্যদিকে আগস্টে এসে করোনা সংক্রমণের গতি কিছুটা কমেছে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার গত ছয় দিন ধরে ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুযায়ী, শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে টানা তিন-চার সপ্তাহ বজায় থাকলে তখন তাকে নিরাপদ সংক্রমণ ধরা যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪.৪১ শতাংশ। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২২৮ জন। এক দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৭ জন বেড়েছে। অন্যদিকে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা আটজন কমেছে। এদিকে চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৩১৮ জন।

৩ হাজার ৫৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। এদিকে বছরের শুরুর দিকে কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতীষ্ট হয়ে উঠেছিল নগরবাসী। তখন মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে দুই সিটি করপোরেশন। বর্তমানে এডিস মশার বিস্তারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও মশক নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহে এক দিনও মশক নিধনে কোনো কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। মধ্য বাড্ডার কয়েকটি এলাকা ঘুরে সড়কে জমে থাকা পানিতে মশার বাচ্চা কিলবিল করতে দেখা গেছে।

হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটততত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হটস্পট ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গিয়ে আপনা আপনি কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে মুগদা, ঢামেক, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ কিছু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। এরা ১-২টা হটস্পট থেকে আসছে। সবার ঠিকানা নিয়ে সহজেই হটস্পটগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। হটস্পটে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে উড়ন্ত মশা মেরে ফেলতে হবে। তাহলে রোগী থাকলেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারবে না। পাশাপাশি মশা যাতে জন্মাতে না পারে সে জন্য বৃষ্টির পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টা খুব কঠিন না। তবে এখানেই আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর