শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ছয় সুপারিশ তদন্ত কমিটির

মিরসরাই ট্র্যাজেডি

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

ছয় সুপারিশ তদন্ত কমিটির

মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘষের্র ঘটনার তদন্তে আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লেভেল ক্রসিং গেটের অব্যবস্থাপনা দূর করাসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া আধুনিকায়নের প্রতিও মনোযোগী হতে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ২৯ জুলাই ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালককে দায়ী করা ছাড়াও ছয়টি সুপারিশ রয়েছে লেভেল ক্রসিং (এলসি) গেট সংক্রান্ত। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যারিয়ার ফেলানোর পর সাধারণ মানুষ যাতে গেট বেরিয়ারে উঠাতে না পারে সে জন্য প্রত্যেকটি গেট লকিং রাখতে হবে, সব এলসি গেটে ট্রেন আসা-যাওয়ার তথ্য প্রদানের জন্য টেলিফোন যোগাযোগব্যবস্থা করা যেতে পারে, সব এলসি গেটের উন্নত প্রযুক্তির প্রবর্তন, সব এলসি গেটে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, সব এলসি গেটে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা এবং রেলওয়ের জিএন্ডএস রুলের (আবশ্যিক নির্দেশনা) ২৩৩/খন্ডএর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মিরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিং গেটে সংঘটিত দুর্ঘটনার বিষয়ে গঠিত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে এলসি গেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলসি গেটের আধুনিকায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে রেলওয়ে কাজ করছে। রেলের এ সংক্রান্ত দফতরগুলো এলসি গেটের সমস্যা ও সংকট দূর করে আধুনিক এলসি গেট ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তথ্যমতে, দেশের অধিকাংশ লেভেল ক্রসিং গেটই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সারা দেশে বিদ্যমান এলসি  গেটের অর্ধেকই অবৈধ। বৈধ যেসব এলসি গেট রয়েছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। নেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। নিয়ম অনুযায়ী রেলপথের চারপাশে চলাচলের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিধিনিষেধ থাকলেও সেগুলোর প্রতিপালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারণে প্রতিদিনই সারা দেশে কোনো না  কোনোভাবে  ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি এলসি গেটের বাধা না মেনে যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘষের্র ঘটনার তদন্তে চার ও পাঁচ সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। একটি তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরমান হোসেনকে। অপর কমিটির প্রধান করা হয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও-অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনসার আলীকে। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার কমিটি প্রতিবেদনটি ১৫ আগস্ট রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এ প্রতিবেদনে গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালক উভয়কেই দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন করা হলেই কমিটির দেওয়া সুপারিশনগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। জানা গেছে, ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতরা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজারের পূর্ব খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ১৩ জনের মধ্যে গাড়িচালক ছাড়া অন্যরা স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন সকালে তারা মাইক্রোবাসে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে যান। দুপুরে সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। দুর্ঘটনার পর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। দুর্ঘটনাস্থলের লেভেল ক্রসিং গেটের গেটম্যান রেলওয়ের নিজস্ব কর্মী নন। মূলত প্রকল্পের অধীনে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গেটম্যানকে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর