মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ও দালালের দৌরাত্ম্যে রোগীদের ভোগান্তি

কুমেক হাসপাতাল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগীদের ভোগান্তি চরমে। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। ৫০০ বেডে থাকছে ১১০০ রোগী। ফ্লোরে চলছে চিকিৎসা। সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে ২৫০ শয্যার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এ হাসপাতালটি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী জনবল দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন ১১০০ রোগী ভর্তি হয়। আউটডোরে চিকিৎসা নেয় প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ রোগী। তাদের সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের স্বল্প আয়ের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। ৭০৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে, যা ৫০০ শয্যার জন্য পর্যাপ্ত নয়। শূন্য রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক পদ। হাসপাতালের সামনের কয়েকটি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসির দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের স্বজনরা। কিছু চিকিৎসক, দুজন ওয়ার্ড মাস্টার ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের কিছু কর্মী দালালদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে সিটে রোগী। সিটের পাশে ফ্লোরে রোগী। হাসপাতালের হাঁটার পথে রোগী। কম জায়গায় বেশি রোগী রাখায় ঘিঞ্জি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরলেও সেখানে মানুষের গায়ের গরমে দাঁড়ানো দায়। নতুন ভবনে নিচতলায় টিকিট কাউন্টারের সামনে এক ক্লিনিক স্টাফকে ঘুরতে দেখা যায়। তিনি সহজ-সরল লোকদের টার্গেট করে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে জানান, সরকারি হাসপাতালে ভালো পরীক্ষা হয় না। কম দামে তার পরিচিত ক্লিনিকে পরীক্ষা হয়। ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, সম্প্রতি আমার এক স্বজন এ হাসপাতালে মারা যান। তার লাশ আনতে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারেনি, বাধা দেয় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। বাইরের অ্যাম্বুলেন্স এখানে প্রবেশ করতে পারে না। সচেতন নাগরিক কমিটি, কুমিল্লার সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি হাসপাতাল প্রশাসন আগের চেয়ে সেবা প্রদানে আন্তরিক। তবে রোগী বেশি হওয়ায় তারা সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, কিছু ব্রাদার, ওয়ার্ডবয় ও নার্স খুব প্রভাবশালী। তাদের দিয়ে কাজ করানো কঠিন। তারা বিভিন্ন ভাইয়ের লোক বলে কর্মকর্তাদের ভয় দেখায়। তারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, এই হাসপাতালে বেড সংকট রয়েছে। ১ হাজার বেডে উন্নীত করা ও সে নিরিখে জনবল দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত আমাদের বেড সংকট কেটে যাবে। সেরা যন্ত্রপাতি রয়েছে। রোগীদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে মানুষ জিম্মি এটা সত্য। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নিয়েছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর