শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ওসি দেন কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সমঝোতা প্রস্তাব

দশম শ্রেণির ছাত্রকে মারধর

রাহাত খান, বরিশাল

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে বরিশালের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মারজুক আলম (১৪)। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই দিনই হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন তার মা ফজিলাতুন্নেছা হাসি। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো ভয়ংকর ওই কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে আপস-রফার প্রস্তাব দেন নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র মারজুকের মা হাসিকে। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ছেলে প্রতিশোধ নিতে লেখাপড়া ছেড়ে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হাসি বেগম। শুধু হাসি নন, ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়ে মামলা দিতে না পেরে ফেরেন হতাশা নিয়ে। ১০ জুন রাতে সদর উপজেলার রাজারচর এলাকায় চরমোনাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক হোসাইন আহমেদ সরদার লিটনের ৬০ শতাংশ জমির কলাবাগানের অর্ধশত কলা গাছ এবং ৪০টি বার্মিজ সুপারি গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। পরদিন ১১ জুন কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ নিয়ে যান লিটন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতাও পায় পুলিশ। তদন্তের নামে তিন দিন ঘোরানোর পরও আসামির নাম উল্লেখ করায় মামলা নেয়নি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন লিটন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. পিন্টু বলেন, মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ফলনসহ কলা গাছ কেটে ফেলার সত্যতা পাওয়া গেছে। শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। মামলার বাদী যুবলীগ নেতা হোসাইন আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর তিন দিন থানার ওসি ও তদন্ত ওসির পেছনে দৌড়িয়েছি। আসামির নাম উল্লেখ করায় পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করে প্রতিকার চেয়েছি। ২৯ জুন নগরীর জর্ডান রোড এলাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক-কর্মচারী ও দালালের হামলায় নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গিয়াসউদ্দিন বাবুল মোল্লা নিহত হন। নিহতের স্বজনরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ডায়াগনস্টিক মালিক ও দালালদের নাম উল্লেখ করায় মামলা নিতে রাজি হয়নি। ৩০ আগস্ট দুপুরে দশম শ্রেণির ছাত্র মারজুক আলমকে ইশ্বরবসু রোডে ডেকে নিয়ে মারধর করে স্থানীয় নাঈম-শান্তর নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং। মাথায় আঘাতের ক্ষত নিয়ে মারজুক বাসায় কাতরাচ্ছে। ওই দিনই তার মা হাসির লিখিত অভিযোগ গতকাল (শুক্রবার) বিকাল পর্যন্ত মামলা হিসেবে রুজু করেনি কোতোয়ালি থানা পুলিশ। হাসি বলেন, নিরীহ ছেলেটাকে কিশোর গ্যাংয়ের মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ওসির কাছে। ওসি মামলা না নিয়ে বলেন কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে। বিচার না পেয়ে মারজুক পড়ালেখা ছেড়ে অন্য কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে মিশে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হাসি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আজিমুল করিম বলেন, অভিযোগে ওই ছাত্রের মা একটা নাম (হামলাকারী) বলেছে। আইডেন্টিফিকেশন বলতে পারেনি। আমরা বলেছি, তাদের (কিশোর গ্যাং) একটু চিহ্নিত করে দেন। আমরা অবশ্যই মামলা নেব। ঘটনাস্থল এবং হামলাকারীদের আডাস্থল সম্পর্কে অভিযোগকারী বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পরও গত চার দিনে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্ত চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর