সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গৃহকর নিয়ে অসন্তোষ চট্টগ্রামে

৩৪০০ টাকার কর এখন ৪০ হাজার টাকা!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

গৃহকর নিয়ে অসন্তোষ চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম নগরের নাসিরাবাদ আল ফালাহ গলির সেমিপাকা ছোট ছোট ৮টি সিঙ্গেল ফ্যামিলি ঘরের গৃহকর আসত ৩ হাজার ৪০০ টাকা। এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নে এ ঘরের কর ধার্য করেছে ৪০ হাজার টাকা। এভাবে নতুন কর মূল্যায়নে ৮ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন করদাতারা। নতুন করে পড়েছেন ভোগান্তি ও দুর্ভোগে। তৈরি হচ্ছে চরম অসন্তোষ। দানা বাঁধছে ক্ষোভ। করদাতাদের দাবি, ভাড়ার ভিত্তিতে নয়, পূর্বের মতো দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ওপর ভিত্তি করেই কর ধার্য করা হোক। অভিযোগ আছে, কর পুনর্মূল্যায়ন ইস্যুটি চসিকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পোয়াবারো হয়েছে। তারা করদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। শুরু হয়েছে কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে অপবাণিজ্য।

জানা যায়, চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। গত ৩০ আগস্ট নগরের সাতটি ওয়ার্ডে একযোগে দেওয়া হয় স্মারকলিপি, গত ২ সেপ্টেম্বর বিকালে কদমতলীতে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা এবং আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর কদমতলী থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশ। ভবন মালিকরা বলছেন, নগরের অধিকাংশ ভবন মালিক ভাড়ার টাকার ওপর নির্ভরশীল। চসিক গৃহকর বৃদ্ধি করলে ভবন মালিক ও ভাড়াটে দুই পক্ষের ওপরই সরাসরি এর প্রভাব পড়বে। তখন ভাড়া বাড়াবেন মালিকরা। এ নিয়ে তৈরি হবে অসন্তোষ। চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, আমরা চসিকের গলা কাটা কর পুনর্মূল্যায়নের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে। গতকাল থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন এবং প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক। এর আগে ২০১৭ সালেও আমরা আন্দোলন করে সফল হয়েছি। জনগণের গণস্বার্থের দাবির আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। তিনি বলেন, একলাফে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি কর বৃদ্ধি করা এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ হতে পারে না। অথচ এখন দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন কঠিন সময়ে বাড়ানো হয়েছে গৃহকর। চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নতুন গৃহকর নিয়ে কেউ হয়রানির শিকার হওয়ার সুযোগ নেই।

 বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে নজরে রাখছি। ভবন মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ বোর্ডে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জানা যায়, চসিক ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন আন্দোলনের মুখে স্থগিত হয়েছিল। তবে বর্তমান মেয়রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত জুলাই থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। পুনর্মূল্যায়নের পর গত মাস থেকে ভবন মালিকদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে চিঠি। ২০১৭ সালে কর পুনর্মূল্যায়নের পর বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পুরনো নিয়মে ওই দাবি ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নতুন কর পুনর্মূল্যায়নের পর সরকারি খাতে হোল্ডিং দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৪৭টি। এর বিপরীতে বার্ষিক দাবি ছিল ২৮০ কোটি টাকা। তাছাড়া বেসরকারি ১ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বার্ষিক দাবি ধরা হয় ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর