সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস। সংগঠনটি বলেছে, দেশজুড়ে জুয়েলারি শিল্পে চুরি, ডাকাতি ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এগুলো দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা এবং চুরিকৃত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছে বাজুস। গতকাল রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন- বাজুস কার্যালয়ে ‘জুয়েলারি শিল্পের নিরাপত্তার দাবি’তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন। এতে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, সংগঠনটির সহসভাপতি গুলজার আহমেদ, সহ-সম্পাদক মাসুদুর রহমান, বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. রিপনুল হাসান, জয়দেব সাহা, কার্ত্তিক কর্মকার, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং এন্ড ল এনফোর্সমেন্টের সদস্য সচিব ইকবাল উদ্দিন, একই কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ শংকর, স্বপন চন্দ্র কর্মকার, বিকাশ ঘোষ ও বাবুল রহমান। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এনামুল হক খান দোলন বলেন, সারাদেশে জুয়েলারি শিল্পের চলমান সঙ্কট ও সমস্যা, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধে কাস্টমসসহ সকল আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযানের দাবি জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাজুস সংবাদ সম্মেলন করেছিলো। এই সংবাদ সম্মেলনের পর আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। বাজুসের আহবানে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো ব্যাপক সাড়া দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সংবাদ সম্মেলনে বাজুস বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি দোকানে চুরি ও প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১ আগস্ট গভীর রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া বাজারের মন্দির মার্কেটের কাঁকন জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল দোকান থেকে প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণের ও দুই কেজি রূপার গহনা চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২৯ জুলাই মিরপুরের রূপনগরে রজনিগন্ধা মার্কেটে দিন দুপুরে নিউ বিসমিল্লাহ জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা দোকান থেকে প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ ভরি রূপা চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২০ জুলাই ময়মনসিংহের ভালুকার প্রদীপ জুয়েলার্সে প্রকাশ্যে ককটেল ফাটিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হয়। ডাকাতদল দোকান থেকে প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এসময় ডাকাতের গুলিতে দোকান মালিক অধীর কর্মকার গুরুতর আহত হন। গত ৬ জুন ময়মনসিংহের ট্রাংক পট্টিতে বর্ষা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা হয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টা থেকে ২৫ এপ্রিল সকাল ৯টার মধ্যে রাজধানী ঢাকার রাজারবাগ কালী মন্দির মার্কেটে মা গোল্ড হাউজ-এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে সবুজবাগ থানায় মামলা করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার মধ্যে রাজধানী ঢাকার কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের রাঙ্গাপরি-তে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ভাষানটেক থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের কালীবাজারে কার্ত্তিক জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় চুরির মামলা করা হয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টার মধ্যে রাজধানীর রমনা মডেল থানাধীন কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্স এর মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট এন্ড বেস্ট গোল্ড ক্রিয়েশন জুয়েল এভিনিউ প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে রমনা মডেল মামলা হয়। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাজুস সদস্য ধীমান ধরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোক প্রকাশ করছি। বাজুস আরও বলেছে, আমরা ঘটনাগুলো দ্রুততার সাথে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা এবং চুরিকৃত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সাথে সারা দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বাজুস মনে করে- সারাদেশে শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গৌরবোজ্জল ভূমিকা রয়েছে। জুয়েলারি শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।