রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চসিকে গৃহকর নিয়ে অসাধুদের ‘পোয়াবারো’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের রহমান নগর এলাকার নাসির নামের এক বাসিন্দার গৃহকর ৩ হাজার ৪০০ টাকার স্থলে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নে বর্ধিত হারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ৪০ হাজার টাকা ধার্য করে। কিন্তু এ করদাতাকে চসিকের এক কর্মচারী ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বছরে ১৫ হাজার টাকা গৃহকর ধার্য করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে তিনি রাজি হননি। অভিযোগ আছে, চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি এক শ্রেণির  কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পোয়াবারে হয়েছে। তারা আপিলের নামে এবং গৃহকর কমিয়ে দেওয়ার নাম দিয়ে করদাতাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে চলছে অপবাণিজ্য। করদাতাদের দাবি, ভাড়ার ভিত্তিতে নয়, পূর্বের মতো দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ভিত্তিতে কর ধার্য করা।      

চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, এখন চসিকের আপিল মানে ঘুষ বাণিজ্য। এটি এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য পোয়াবারো হয়েছে। অনেককেই টাকার বিনিময়ে কর কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে বলেছি। তিনি বলেন, আমরা ১৯৮৬ সালের গৃহকর আইন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাব। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া প্রতিদিনই পাড়া-মহল্লায় চলছে উঠোন বৈঠক-মতবিনিময়। গণদাবির সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। 

জানা যায়, কর নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি চসিকের নজরে এসেছে। এ নিয়ে সংস্থাটি বুধবার স্থানীয় পত্রিকায়  বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘আপিল করতে গিয়ে কিংবা গৃহকর পরিশোধ করতে গিয়ে কর কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাধ্যমে কোনোরূপ হয়রানির শিকার হলে কিংবা অনৈতিকভাবে অর্থ দাবি করলে চসিক মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস) এবং রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।’ তাছাড়া বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত চসিকের ২০তম সাধারণ সভায় মেয়র বিষয়টির প্রতি নজর রাখতে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের তাগাদা দেন। 

চসিক মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেনি। অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ নিয়ে কাউকে ছাড় না দেওয়ার নির্দেশনা আছে মেয়রের পক্ষ থেকে। তাছাড়া, গৃহকরের বিষয়ে করদাতার আপিল বোর্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সহনীয় পর্যায়ে কর পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে।

জানা যায়, চসিক ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিক কর পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন আন্দোলনের মুখে স্থগিত হয়েছিল। তবে বর্তমান মেয়রের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত জুলাই থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। পুনর্মূল্যায়নের পর গত জুলাই মাস থেকে ভবন মালিকদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে চিঠি।

২০১৭ সালে কর পুনঃমূল্যায়নের পর বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু পুরোনো নিয়মে ওই দাবি ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নতুন কর পুনঃমূল্যায়নে সরকারি খাতে ২ হাজার ৫৪৭টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বার্ষিক দাবি ছিল ২৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ১ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বার্ষিক দাবি ধরা হয় ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর