বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তবু হকারমুক্ত হয়নি গুলিস্তান

সাত বছরে দুই শতাধিক উচ্ছেদ অভিযান

হাসান ইমন

তবু হকারমুক্ত হয়নি গুলিস্তান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত এক সপ্তাহ টানা গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে যখন সিটি করপোরেশন অভিযানে আসে, তখন হকাররা ফুটপাত থেকে দোকান সরিয়ে ফেলেন। আবার যখন অভিযান শেষ করে চলে যায়, তখন আবার ফুটপাতে দোকান বসান তারা। গত সাত বছরে সংস্থাটি দুই শতাধিক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও দখলমুক্ত হয়নি গুলিস্তান। যদিও ডিএসসিসি বলছে, গুলিস্তান এলাকায় কোনোভাবেই হকারদের বসতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, আহাদ বক্সসহ যেসব সড়ক রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, ওই সব সড়কের ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। হকারদের উচ্ছেদে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন বসতে পারে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ কিছু হকার বেচাবিক্রি করছে। তবে শামিয়ানা টানিয়ে বা চৌকি বসিয়ে ফুটপাতে কোনো দোকান বসছে না। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে গুলিস্তানকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে। যানজট নিরসনে ও পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় সংস্থাটি। এতেও কোনো সুফল পায়নি সিটি করপোরেশন। অতীতের মতো এবারও হকার উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের দখল হয়ে গেছে রেড জোন এলাকা। দ্বিতীয় দিনের মতো সিটি করপোরেশনের লোকজন রেড জোনে উচ্ছেদ চালাতে গিয়ে হকারদের বিক্ষোভের মুখে সরে যান। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাওয়ের হুমকি দেন হকাররা। এর আগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে হকারদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছাত্রলীগের দুই নেতা ফাঁকা গুলিও ছুড়েছিলেন। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গুলিস্তান। তখন উল্টো নিজ দলের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন সাঈদ খোকন। এর পরও অনেকবার গুলিস্তান, মতিঝিল ও নিউমার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। কিন্তু কোনোটি স্থায়ী হয়নি। এরপর হকারদের ফুটপাতে বসতে নতুন টাইম শিডিউল করে দেওয়া হয়। কিন্তু এ পদক্ষেপও কাজে আসেনি। পরে সাঈদ খোকন গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করার কাজ বন্ধ রাখেন। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা অভিযান চলছে। তবু ফুটপাতের দখল ছাড়ছেন না হকাররা। ফলে কোনোভাবেই দখলমুক্ত হচ্ছে না ফুটপাত।

গত তিন দিন সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলিস্তান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেলা ১১টা থেকে রাস্তা ও ফুটপাতে হকাররা বসতে শুরু করেন। তাদের কার্যক্রম চলে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত। এই সময়ে এ এলাকা জনসমাগমপূর্ণ থাকে। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে দোকান উচ্ছেদ করে। এর আগেই হকারদের লাইনম্যান দোকান উঠিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন। পুলিশ চলে গেলে ফের বসানো হয় দোকান। এদিকে ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় পথচারীরা রাস্তায় নেমে যাতায়াত করতে বাধ্য হন।

তবে হকার্স নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সমন্বয় করে হকারদের ফুটপাত-রাস্তায় বসার সুযোগ দিয়েছেন। বিনিময়ে তারা প্রতিদিন গুলিস্তান থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। চাঁদার বড় অংশ ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের পকেটে যায়। এ কারণেই গুলিস্তানের রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হকার্স লীগ ও বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যত দিন পর্যন্ত হকারদের পুনর্বাসন করা না হবে, তত দিন হকাররা গুলিস্তান ছাড়বেন না। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দিতে হবে। ২ হাজার ৫০২ জন হকারের তালিকা হয়েছে। এখনো অনেক হকারের তালিকা হয়নি। হকারদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা ছাড়বেন না।

তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানে জিরো পয়েন্ট থেকে আহাদ বক্স, বঙ্গভবনসহ রোড রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় বা আলোচনা করেনি। তবে আমরা হকারদের পুনর্বাসন চাই। যেসব হকারের তালিকা করা হয়েছে, এদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের সরকারি বা বেসরকারি চাকরি, আর প্রশিক্ষিত হকারদের বিদেশ পাঠানো এবং আইডি কার্ডধারী হকারদের সরকারি মার্কেটে দোকানের ব্যবস্থা করা আমাদের দাবি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর