শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গৃহকর ইস্যুতে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম

আন্দোলনকারী নেতার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা, জিডি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করছে। পুনর্মূল্যায়নে কয়েকগুণ গৃহকর বৃদ্ধি হওয়ার অভিযোগ এক মাস ধরে নাগরিক কর্মসূচি পালন করছে ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। কিন্তু সুরক্ষা পরিষদের একটি সভার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়। তাছাড়া, সংগঠনের তিন নেতার বিরুদ্ধে দুই থানায় জিডি হয় দুটি। পক্ষান্তরে মেয়রের পক্ষে কাউন্সিলর ও দলীয় নেতা-কর্মীরাও পালন করছেন নানা কর্মসূচি। ফলে গৃহকর ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চট্টগ্রামে। এরই মধ্যে আজ বিকালে কদমতলি মোড়ে আয়োজন করা হয়েছে গণমিছিল ও সমাবেশের। করদাতা সুরক্ষা পরিষদের দাবি, ভাড়ার ভিত্তিতে নয়, আগের মতো দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ভিত্তিতে কর ধার্য করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন-কর্মসূচি চলমান থাকবে। জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর মাদারবাড়িতে এক সমাবেশে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে চসিক মেয়রকে নিয়ে ‘মানহানিকর’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী। তাছাড়া, গত মঙ্গলবার রাতে বায়েজিদ বোস্তামি ও ডবলমুরিং থানায় জিডি হয় করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার, মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী ও সংগঠক মো. সৈয়দ আহমদের বিরুদ্ধে। তবে সংগঠনটির কর্মসূচি অব্যাহত আছে। আজ বিকালে কদমতলি থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব পর্যন্ত আয়োজন করা হয়েছে গণমিছিল। সঙ্গে আছে পূর্ব ঘোষিত ধারাবাহিক মহাসমাবেশ, গণশুনানিসহ নানা কর্মসূচি। অন্যদিকে, নুরুল আবছারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলররা।

প্রতিবাদ জানিয়েছেন চসিক সিবিএ। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে পশ্চিম মাদারবাড়ি ও পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায়।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিন বলেন, ৩০ আগস্ট থেকে আমরা গৃহকরদাতাদের নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে যাব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। গণদাবি কখনো ব্যর্থ হয় না। করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী বলেন, ইতোমধ্যেই একটি মামলা ও দুটি জিডি হয়েছে। আমাদের কর্মসূচি বানচাল করার জন্য এসব হয়রানিমূলক মামলা করা হচ্ছে। তাতে কোনো করদাতাই শঙ্কিত নয়। আমরা জনস্বার্থের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় করেই ঘরে যাব। নাম প্রকাশ না করে এক কাউন্সিলর বলেন, মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।  

জানা যায়, চসিক ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন আন্দোলনের মুখে স্থগিত হয়েছিল। তবে বর্তমান মেয়রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জুলাই থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় চসিক।

পুনর্মূল্যায়নের পর জুলাই মাস থেকে ভবন মালিকদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে চিঠি। ২০১৭ সালে কর পুনর্মূল্যায়নের পর বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু পুরনো নিয়মে ওই দাবি ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নতুন কর পুনর্মূল্যায়নে সরকারি খাতে ২ হাজার ৫৪৭টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বার্ষিক দাবি ছিল ২৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ১ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বার্ষিক দাবি ধরা হয় ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।  

সর্বশেষ খবর