শিক্ষার্থীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা। ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় সব সময় লেগে থাকে তীব্র যানজট। বেপরোয়া গতিতে চলে রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, সিএনজি ও বাস। তবু রাস্তা পারাপারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য নেই একটি ফুটওভার ব্রিজও! রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে বেপরোয়া লেগুনা, বাইক ও বাসের তান্ডবে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি কিছুদিন আগে প্রধান ফটকের সামনে সাভার পরিবহনের বেপরোয়া বাসের সঙ্গে রিকশার সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এ ছাড়াও কিছুদিন আগে বেপরোয়া লেগুনার ধাক্কায় রিকশা থেকে পড়ে আহত হন দুই সহকারী প্রক্টর। এ ছাড়াও সাভার পরিবহন বাসের চাপায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিরাপত্তাকর্মী। সরেজমিন দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে কয়েকটি সড়ক একত্রিত হয়েছে। গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীর গাড়িগুলো রায়সাহেব বাজার দিয়ে জবির প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে যায়। এদিকে সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলোও প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে যায়। অন্যদিকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিক থেকে আসা একটি সড়কও মিলিত হয়েছে প্রধান ফটকের সামনে। শুধু মেইন গেটই নয়, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলের সামনে দিয়ে রাস্তাটি হওয়ায় আরও ঝুঁকি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্রীদেরও। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের জন্য নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুটওভার ব্রিজের জন্য দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় স্পিডব্রেকার থাকলেও ফটক থেকে দূরে হওয়ায় বেড়েছে সমস্যা। স্পিডব্রেকার পার হয়েই যানবাহনগুলো আরও দ্রুতগতিতে চলতে থাকে সড়কে। অতি সরু এই রাস্তায় ফুটপাতে দোকান আর রিকশার অবস্থানের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে দিনের সিংহভাগ সময়ই থাকে যানজট। তাছাড়াও যানজটের অন্যতম কারণগুলা হলো, পাঠাও-এর বাইক ও লোকাল বাসের যাত্রী ওঠা-নামা গেটের ডান পাশে অবস্থান করে। বিভিন্ন ধরনের টং দোকান রাস্তার দুই পাশ দখল করে রেখেছে। তাছাড়াও গেটের পাশেই ভিক্টর ক্লাসিক, সাভার পরিবহন, তানজিল, বিহঙ্গ, আজমেরী গ্লোরী, ৭ নম্বর ইত্যাদি বাস যাত্রী ওঠা-নামানোর কাজ করে। সেখানে রয়েছে এসব পরিবহনের টিকিট কাউন্টারও। এ ছাড়া নদী পথে চলাচলকারী সদরঘাটগামী লাখো মানুষের যাওয়া-আসার জন্যও এই রাস্তা ব্যবহৃত হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ণালী সাহা বলেন, প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা রাস্তা পারাপার হই। রাস্তা পার হতে গিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার মিতু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে আসা লোকাল বাসের সামনে পড়ে এক শিক্ষার্থী। অল্পের জন্য বেঁচে যায় তার পা। এভাবেই প্রতিনিয়তই আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকারের সম্মুখীন হয় শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রায়ই শিক্ষার্থীদের প্রশাসনকে বারবার ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের জন্য বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা ট্রাফিকের দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়াও মেয়র ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুতই আশা করি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।