সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

৪২ কোটি টাকার আধুনিক ল্যাব ১৫ মাস ধরে বন্ধ

চসিক খাদ্য পরীক্ষাগার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আরবান পাবলিক অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের বিবিরহাটে নির্মিত হয় আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার। পরে সেটি হস্তান্তর করা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক)। বসানো হয় ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্রায় ৮৯টি ছোট-বড় মেশিন। তৈরি করা হয় পৃথক ছয়টি ল্যাব।     

গত ১৫ মাস ধরে এটি বন্ধ। ১৫ মাস ধরে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন। ৯ মাস ধরে বন্ধ এখানে কর্মরতদের বেতন। প্রক্রিয়া চলছে ল্যাবের সামনেই পাঁচটি দোকান বসানোর। নষ্ট হওয়ার পথে আধুনিক মেশিনগুলো। এটি দেশের দ্বিতীয় আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার। ২০১৫ সালে ল্যাবটি চালু হয়।

অভিযোগ আছে, চসিকের দায়িত্বশীলদের অবহেলা-উদাসীনতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য পরীক্ষাগারটি এখন বন্ধ হয়ে আছে। অভিজ্ঞজনদের মতে, চসিক নিয়মিত হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলেও এটি এখন বন্ধ। অথচ চসিক চাইলে এটিকে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে পারত। দরকার ছিল কেবল আন্তরিকতা ও উদ্যোগের। কিন্তু এখন ৪২ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হওয়ার পথে। দীর্ঘদিন ধরে চালু না থাকায় মেশিনগুলোও নষ্ট হওয়ার পথে। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপন প্রকল্প নেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ইউপিইএইচএসডিপি প্রকল্পের আওতায় এবং এডিবির অর্থায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মিত পরীক্ষাগার দুটি ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুই শহরেই ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মিত হয়। পরে চট্টগ্রামের পরীক্ষাগারে ৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের পৃথক ছয়টি ল্যাবে বসানো হয় ১০ কোটি টাকারও বেশি দামের ছোট-বড় ৮৯টি মেশিন। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ মেশিনই জার্মানির উন্নত প্রযুক্তির, কিছু মেশিন যুক্তরাজ্যের। ২০১৫ সালে চালুর পর এখানে প্রকল্পের অধীনে ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ১৫ জন অন্যত্র চলে যান। বাকি ৯ জন গত ৮-৯ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, এটি চট্টগ্রামের একমাত্র খাদ্য পরীক্ষাগার। এটি চট্টগ্রামের সম্পদ। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরীক্ষা করে রাজস্বও আয় করা যেত। মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল দিয়ে চসিকের অর্থায়নে পরিচালনা করার জন্য।

 কিন্তু বর্তমানে চসিকের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তা করা যায়নি। ফলে ল্যাবটি এখন বন্ধ আছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুতের বিষয়টি চসিক বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।  বিদ্যুৎ না থাকায় মেশিনগুলোরও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি, কোনোভাবে ল্যাবটি চালু রাখার জন্য।   

গতকাল দুপুরে সরেজমিন এ পরীক্ষাগারে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকটি তালা মারা। ফটকে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘বিকল্প দরজা ব্যবহার করুন’। কিন্তু বিকল্প দরজায় গিয়েও দেখা যায় সেটিও তালা মারা। এই দরজার সামনেই তৈরি করা হচ্ছে দোকান। অথচ দোকানের ঠিক ওপর দিয়ে গেছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং মাটির নিচ দিয়ে গেছে গ্যাস লাইন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২০ জুন ‘আরবান প্রকল্পর মাধ্যমে নির্মিত পরীক্ষাগার দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালনা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রস্তাবিত জনবল চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রকল্প সমাপ্তির পর অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দুটি ফুড ল্যাবে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করবে।’ কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব জনবল কাঠামোয় জনবল দিয়ে ল্যাব পরিচালনা করলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তা করেনি। ফলে এখানে কর্মরতরা এখন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বর্তমানে আধুনিক এই ল্যাবে কেমিস্ট, সহ-কেমিস্ট, দুজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট, একজন চসিকের নিজস্ব মাইক্রোবায়োলজিস্ট, অফিস সহকারীসহ ৯ জন কর্মরত। ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ পরীক্ষাগারে বিভিন্ন পদে ৩৪টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে যায়।

জানা যায়, চালুর পর এখানে নিয়মিত নানা ধরনের খাবারের নমুনা পরীক্ষা করা হতো। পরীক্ষার মাধ্যমে আয়ও হতো। আধুনিক এই পরীক্ষাগারে দুধ ও দুধ জাতীয় পণ্য, মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় পণ্য, কার্বনেট বেভারেজ, জুস জাতীয় পণ্য, ড্রিংকিং ওয়াটার, সস জাতীয় পণ্য, মসলা পণ্য, ¯ন্ডেকস ফুড, বেকারি পণ্য, আইসক্রিম, ড্রাই স্যুপ, নুডলস, পাস্তা, আটা, ময়দা, সুজিসহ ২০ জাতীয় খাবার টেস্ট করা হতো। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর