সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

হয়রানি চলছেই, এবার ফোন ভাঙল পুলিশ

কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিস

কুমিল্লা প্রতিনিধি

হয়রানি চলছেই, এবার ফোন ভাঙল পুলিশ

কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের বিতর্কিত উপ-পরিচালক (ডিডি) নুরুল হুদাকে বদলির পর আরেক নুরুল হুদা যোগদান করেছেন। তার যোগদানের পরও কমেনি সেবাগ্রহীতাদেরকে হয়রানি করা। দৌরাত্ম্য বেড়েছে দালালদেরও। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ। এবার টাকা নিয়ে সেবা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোনও ভেঙে দিয়েছে পুলিশ।

গৌরিপুর থেকে আসা মোহাম্মদ শাহীন অভিযোগ করেন, ‘সকাল ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি গেটের বাইরে। ৮টার পর গেটের ভিতরে প্রবেশ করি। লাইন আর সামনে যায় না। পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্যরা সামনে এগিয়ে দেয়। তাই পুলিশ কনস্টেবল রেজাউল করিমকে বললাম, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বললেন, ৫০০ টাকা দেও। ৫০০ টাকা নিয়ে তিনি দূরে দূরে থাকেন। ওনাকে বললাম, স্যার কাজ না করলে টাকা ফেরত দেন। তখন তিনি আমাদের দুজনকে হুমকি দেন লকআপে ঢোকাবেন বলে। তখন ৯৯৯ নম্বরে কল দেওয়ার সময় হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে তিনি ভেঙে ফেলেন। এ বিষয়ে ডিডির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি।’ বরুড়ার ঝলম থেকে আসা বাহাউদ্দিন বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাব। লাইনে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু ভুল হয়েছে বলে জমা রাখেনি। একই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য বাবুল দালালকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তখন ঠিক জমা রেখেছে।’ গতকাল পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ভিতরে বাইরে কয়েক শ মানুষের জমায়েত। এখানে একটু পরপর একজন জিজ্ঞাসা করে- লাইন লাগবে না আসেন। ভিতরে প্রবেশ করতেই নজরে পড়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কর্মতৎপরতা। আইনশৃঙ্খলায় দায়িত্ব থাকা সদস্যদের কাছে দৃশ্যমান ছিল না পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্র দৃশ্যমান ছিল না পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরও। পাসপোর্ট অফিসের সামনে কথা হয় বাবুল নামের এক দালালের সঙ্গে। তিনি জানান, ২৯ বছর ধরে এ অফিসে কাজ করেন। কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। দিনে চার-পাঁচটা কাজ করে দেওয়া কোনো বিষয়ই না। নতুন ডিডি সম্পর্কে এ দালাল সর্দার বলেন, বর্তমান ডিডিও খুব ভালো। সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ভাঙা ও টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম খান বলেন, ‘উনি আমার কাছে সহযোগিতা চাইছেন। তাই সহযোগিতা করেছি। টাকা নিয়ে ফেরত দিয়েছি।

 তিনি ভিডিও করে ৯৯৯ নম্বরে কল দেন। আমি বলছি, বন্ধ রাখেন। মোবাইল ফোন ভাঙিনি।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বলেন, ‘মোবাইল ফোন ভাঙার অভিযোগ পেয়েছি। বলেছি মোবাইল ফোনের দাম দিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি জয়েন করেছি গত মাসের শেষ সপ্তাহে। কাজ শুরু করেছি মাত্র। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারেন সাবেক ডিডি নুরুল হুদা। সেদিন ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের নজরে আসে। এ ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্বাস উদ্দিন র‌্যাবকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। গত মাসের ১২ সেপ্টেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেই ডিডিকে বদলি করা হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর