বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

গরমে পানি সংকট বর্ষায় জলাবদ্ধতা

ভরাট হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের খাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

গরমে পানি সংকট বর্ষায় জলাবদ্ধতা

চট্টগ্রাম নগরের ছোট বড় খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মকালে দখল-ভরাট হয়ে যাওয়া অধিকাংশ খাল প্রায়ই শুকিয়ে যায়। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সন্ধান মিলে না পানির। আগুন নির্বাপণে সংকটে পড়তে হয় পানির জন্য। প্রাকৃতিক খালগুলো ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা ও গ্রীষ্ম- দুই মৌসুমেই চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমের প্রথম তিন মাসে ঘরবাড়ি, গোডাউন, বিভিন্ন কারখানায় অন্তত ২০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব আগুন নির্বাপণে পানির প্রধান উৎস স্থানীয় প্রাকৃতিক খাল। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পানি নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। দূরে কোনো উৎস থেকে পানি আনতে আনতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু।

নগরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মিয়াখান নগরের বাসিন্দা ওয়াসিম বলেন, গত ৫ মার্চ রাতে আগুন লাগে। আমরা পাশের একটি ভবন থেকে পানি মারি। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি গাড়ি আসে। কিন্তু তারা আশপাশে পানির উৎস খুঁজে পাচ্ছে না। আশপাশের খালগুলো থেকে পানি নিতে পারলে আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হতো।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব এইচ এম মুজিবুল হক বলেন, নগরে প্রতিনিয়তই খাল ভরাট ও দখল হচ্ছে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। আবার গ্রীষ্মকালে খাল শুকিয়ে যায়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেই বিপাকে পড়তে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। অর্থাৎ খাল দখল-ভরাট হওয়ার কারণে সারা বছরই সমস্যায় পড়তে হয়। এ ব্যাপারে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় যে সব খাল-পুকুর অবশিষ্ট আছে সেগুলোও অচিরেই নাই হয়ে যাবে। আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মালেক বলেন, আগুন নেভানোর পানির প্রথম ও প্রধান উৎস খাল-পুকুরের পানি। কিন্তু এখন খাল-পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অগ্নিদুর্ঘটনার সময় আমরা মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হই। অতিরিক্ত পানির দরকার হলে বিপাকে পড়তে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানির উৎস না পাওয়ায় আগুন নেভাতে সময় বেশি লেগে যায়। এসব বিষয় নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি লিখি। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয় না।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল সংস্কার কাজ চলছে। এর বাইরে ২১টি খাল সংস্কারের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এরপরই প্রকল্প গ্রহণ করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালগুলো সংস্কার-উন্নয়ন করা হবে। তাছাড়া চসিকের উদ্যোগে রুটিন কাজের অংশ হিসাবেও নিয়মিত পরিষ্কারের কাজ চলমান আছে।

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরে ছোট বড় ৫৭টি খাল আছে। এর মধ্যে ৩৬টি খাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের অধীনে খনন ও সংস্কার করছে। বাকি ২১টি খাল ভরাট, দূষণ ও দখলের কবলে পড়ে বেহাল অবস্থায় ছিল। বর্তমানে চসিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব খাল দিয়েই নগরের পানিগুলো প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর