বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন

তিন কারণে তিন জেলা হারাল ক্ষমতাসীনরা

প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল, টাকা দিয়ে ভোট কেনা, বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের প্রভাবিত করা

নজরুল মৃধা, রংপুর

তিন কারণে তিন জেলা হারাল ক্ষমতাসীনরা

এবারও জেলা পরিষদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের তিন জেলা হারিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিগত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিভাগের তিন জেলা হারিয়েছিল। হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে নানা সমীকরণ উঠে এসেছে। কেউ বলছেন প্রার্থী নির্ধারণ ঠিক হয়নি। আবার কেউ বলছেন কালো টাকার কাছে সরকারদলীয় প্রার্থীরা হেরে গেছেন। আবার কেউ বলছেন ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াত জোট ভোটারদের প্রভাবিত করে আওয়ামী লীগকে হারিয়েছে।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট ও ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- কুড়িগ্রামের আলহাজ মো. জাফর আলী,  লালমনিরহাটের অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান এবং ঠাকুরগাঁওয়ের মো. সাদেক হোসেন কুরাইশী। এ ছাড়া বিভাগের অন্য পাঁচ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে।  এর মধ্যে রংপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা  মো. মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ মো. দেলোয়ার হোসেন, পঞ্চগড়ে স্বতন্ত্র  প্রার্থী আবদুল হান্নান শেখ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এই তিনটি জেলা আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছে। অপরদিকে গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু বকর সিদ্দীক, নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক নির্বাচিত হয়েছেন। জানা গেছে, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে গাইবান্ধায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান আতা, নীলফামারীতে জাতীয় পার্টির বীরমুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুল্লাহ বাচ্চু। এবার পঞ্চগড় বাদে নীলফামারী ও গাইবান্ধা আওয়ামী লীগের হাতে এলেও রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা পরিষদ আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছে। এই তিনটি জেলা হাতছাড়া হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান,  কেন্দ্র থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হয়েছে। প্রার্থী বাছাই ঠিক হলে রংপুর বিভাগের সবকটিতেই আওয়ামী লীগ জিতত। আবার অনেকের মতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অনেক টাকার মালিক। টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন। টাকার কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি ভোটার নীতিগতভাবে     আওয়ামী লীগের বিপক্ষ ধারা রাজনীতিতে বিশ্বাসী হওয়ায় তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেননি। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট ভোটারদের প্রভাবিত করেছে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য।  রংপুর ও দিনাজপুরের কয়েকটি উপজেলার ভোটার রয়েছে বিএনপি- জামায়াত ও জাতীয় পার্টির মতাদর্শী। এ কারণে এবার রংপুর বিভাগের ৩টি জেলা পরিষদ আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছে। রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ হেরে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,  কালো টাকার কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। সবচেয়ে শোচনীয়ভাবে আওয়ামী লীগ হেরেছে দিনাজপুর জেলায়। এই জেলায় জাতীয় পার্টি প্রার্থী ১১০০ এর ওপর ভোট পেলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১০০-এর নিচে। এখানেও কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর