বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

তৃণমূলে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ, বিভক্তি

সুজার মৃত্যুর চার বছর পরও অনুসারীদের মন জয় করতে পারেননি শীর্ষ নেতারা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রীতিমতো কাঠখড় পুড়িয়ে জিততে হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জেলা শাখার সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদকে। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ক্রীড়া সংগঠক এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ও বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম পেয়েছেন মোট ৪৪০ ভোট। দারা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই ও ডা. বাহারুল আওয়ামী লীগ নেতা সুজার অনুসারী। বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সুজার ভাই ও এক অনুসারী রীতিমতো আওয়ামী লীগের বাঘা নেতাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েই মাঠে ছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় মিটিং করলেও তৃণমূলে সুজার অনুসারীদের মন জয় করতে পারেননি। জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজার একসময়কার বিরোধে নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরেও অনুসারীদের অভিমান ভাঙিয়ে মূল ধারায় ফেরাতে পারেননি শীর্ষ নেতারা। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী জানান, ‘দীর্ঘদিন পার হলেও সাবেক সাধারণ সম্পাদকের (সুজা) প্রভাব উপজেলা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়ে গেছে। তিনি ওই সময় যাদের দলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তারাই এখন প্রতিদান দিচ্ছেন। এ ছাড়া যাদের কারণে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল (কিছু হাইব্রিড নেতা) এবারও তারাই দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করেছেন।’ সুজিত অধিকারী বলেন, এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিভাবক শেখ হেলাল উদ্দিনের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ৯৭৭ ভোটের মধ্যে বিরোধী এই পক্ষটি ৪৪০ ভোট পেয়েছে যা উদ্বেগের বিষয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার হিসাব আমাদের যে বার্তা দিয়েছে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে খুলনার ১০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ডুমুরিয়া, তেরখাদা ও রূপসায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদের থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দারা বেশি ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া চালনা (দাকোপ), পাইকগাছা কেন্দ্রেও শেখ হারুণ ও দারা কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন। শুধু ফুলতলা, কয়রা ও বটিয়াঘাটা কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর ১২৭ ভোটের ব্যবধান জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেছে।

এই তিন কেন্দ্রে শেখ হারুনুর রশীদ পেয়েছেন ১৮০ ভোট ও দারা পেয়েছেন ৫৩ ভোট। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলা শেখ হারুনের জন্মস্থান ও পাইকগাছা, ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের ভোটারদের সঙ্গে শেখ হেলাল উদ্দিন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সরাসরি দলের প্রার্থীর পক্ষে কথা বলেছিলেন। জানা যায়, সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে দলীয় কোন্দলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পরাজিত হলে বড় খেসারত দেয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর