রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

এক বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মালিক শ্রমিকের ১ হাজার ৬৭টি বিরোধ

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কাল

মাহবুব মমতাজী

সারা দেশে গত এক বছরে শিল্প-কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হওয়া ১ হাজার ৬৭টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতকরণ, অগ্নিকাণ্ড, গুজব এবং ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর যাত্রা শুরু ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের। এর বিধিমালায় বলা হয়, শিল্প প্রতিষ্ঠান, পণ্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান, কারখানা, রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল, সরকারি বা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো শিল্প পুলিশের অধিক্ষেত্র। এসব এলাকায় শিল্প সংক্রান্ত মামলা তদন্ত কার্যক্রমের ক্ষমতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত ঢাকার আইপি-১ ইউনিটে বিরোধের অভিযোগ ছিল ৪৭৮টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৬০টির। গাজীপুরের আইপি-২ ইউনিটে অভিযোগ ছিল ১৮২টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৪টির। চট্টগ্রামের আইপি-৩ ইউনিটে অভিযোগ ছিল ৪৪টি, নিষ্পত্তি হয়েছে সবকটিই। নারায়ণগঞ্জের আইপি-৪ ইউনিটে অভিযোগ ছিল ৩০৫টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭২টির। ময়মনসিংহের আইপি-৫ ইউনিটে ৯১টি অভিযোগ ছিল, সবকটিই নিষ্পত্তি হয়েছে। সিলেটের আইপি-৬ ইউনিটে অভিযোগ ছিল ১৩৬টি, নিষ্পত্তি হয়েছে সবকটিই। মোট ১ হাজার ২৩৬টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৭টির। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মালিক এবং শ্রমিকদের আইনগত সেবা দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও এফইএসের তথ্যানুযায়ী, দেশে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ২৫৯টি শিল্প বিরোধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৭৫টি বিরোধ (প্রায় ৬৮ শতাংশ) শ্রমিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। পোশাক খাতে শিল্প বিরোধের ঘটনা ২০০৮ সালে ২০৯টি, ২০০৯ সালে ১৭৯টি এবং ২০১৩ সালে ১৯৯টি ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিল্প বিরোধ বা শ্রমিক অসন্তোষ তুলনামূলক কম। এতে শিল্পসংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অর্থায়নে বিআইএসআর ট্রাস্টের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বাংলাদেশে শিল্প শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ভূমিকার একটি চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে শিল্পসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার ও ৪৭০ শ্রমিকের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অসন্তোষ চলাকালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিক্ষোভরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমও হয়। সম্ভাব্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা করে। অর্থাৎ অসন্তোষ নিরসনে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ’ একটি সক্রিয় তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা পালন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ ও খুলনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের জনবলের সংখ্যা ৩ হাজার ৮১০ জন। এর কার্যক্রমের আওতায় থাকা ৭ হাজার ৪৯১টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ জন শ্রমিক, ৬০টি এনজিও এবং ১১৬টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে।

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বিলস ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২১’ এর তথ্য প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু এবং ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪৭ জন এবং আহত হয়েছেন ১২৫ জন। বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি। এরমধ্যে ১৭২টি শ্রমিক অসন্তোষ ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। গত বছর আন্দোলন করতে গিয়ে নারীসহ ছয় শ্রমিক নিহত এবং ১৬৩ জন আহত হয়েছেন। বকেয়া বেতনের দাবিতে ১২৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দাবি আদায়ে ১১৫টি, অধিকার আদায়ে ৭৪টি, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ২৭টি, লে-অফের কারণে ২৬টি, ভাতার দাবিতে ২২টি, বোনাসের দাবিতে ১৬টি এবং অন্যান্য দাবিতে ২৯টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আগের বছর ২০২০ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সবমিলিয়ে ৫৯৩টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯টি শ্রমিক আন্দোলন হয় পাটশিল্পে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর