সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মানব পাচারকারীর খপ্পরে শ্রমজীবীরা

আলাদা অভিযানে পাঁচ পাচারকারী গ্রেফতার, ৬২ জন উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

মানব পাচারকারীর খপ্পরে শ্রমজীবীরা

স্বল্প শিক্ষিত, নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে ও শ্রমজীবীদের টার্গেট করে খুলনায় পাচারকারী চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গত কয়েকদিনে আলাদা অভিযানে পাচারের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে  গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় নারী ও শিশুসহ পাচার হওয়া ৪২ জনকে উদ্ধার করা হয়। ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে এদের পাচার করা হচ্ছিল। এর মধ্যে এক নাবালিকাকে ঢাকায় চাকরি দেওয়ার নামে ভারতের যৌনপল্লীতে বিক্রি করা হয়।

জানা যায়, ২৭ অক্টোবর ভারতে ভালো চাকরি দেওয়ার নামে চট্টগ্রাম থেকে রাজ সাহাসহ তিনজনকে খুলনায় আনে একটি পাচারকারী চক্র। পরে খুলনা থেকে তাদের যশোরে নেওয়া হয়। বিষয়টি টের পেয়ে র‌্যাব-৬ এর সদস্যরা শনিবার রাতে যশোরের চৌগাছা থেকে পাচারকারী সদস্য আজাহার উদ্দিন ও কোরবান আলীকে গ্রেফতার করে। পরে ভুক্তভোগী রাজ সাহা বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

এর আগে ১৬ অক্টোবর রাতে মানব পাচার চক্রের মূল হোতা ওহিদ মোল্লাকে (৪৭) গ্রেফতার করে র‌্যাব। চক্রটি ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর একজন নাবালিকাকে ঢাকায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভারতের যৌনপল্লীতে পাচার করে। র‌্যাব-৬ এর মিডিয়া কর্মকর্তা তারেক আনাম জানান, সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নাম করে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অল্প বয়সী মেয়েদের ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছিল।

এ ছাড়া ২৬ অক্টোবর পাইকগাছা থেকে ভালো বেতনে কাজের প্রলোভনে পাচারের সময় আরও দুই পাচারকারী গ্রেফতার হয়। এ সময় নারী ও শিশুসহ ৫৯ জনকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, দরিদ্র অসহায় শ্রমজীবী মানুষদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রটি। পাইকগাছা থেকে নড়াইলে ইটের ভাটায় কাজ দেওয়ার কথা বলে বাসে করে তাদের খুলনায় আনা হয়। পরে কৌশলে তাদের চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নেওয়ার সময় র‌্যাবের অভিযানে পাচারকারী লিটন গাজী (৫৪) ও সোহাগ গাজী (১৯) গ্রেফতার হয়। জানা যায়, শ্রমিকদের অমতে চট্টগ্রামে নিয়ে তাদের মহাজনের কাছে বিক্রির ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শ্রমিকরা ওই এলাকার ইট ভাটায় নির্মম নির্যাতনের কথা ভেবে আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে র‌্যাব তাদের উদ্ধার করে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ভুক্তভোগী বুঝতেই পারেন না যে তারা পাচার হচ্ছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, শ্রমজীবী মানুষদের টার্গেট করে চক্রটি সক্রিয় রয়েছে। খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার শ্রমজীবী মানুষ ভালো কাজের আশায় পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। কাজ করেও অনেকে ন্যায্য মজুরি পান না, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেকে পাসপোর্ট ছাড়া সীমানা পার হতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর