বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজশাহীর হিমাগারে আলুতে পচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর হিমাগারে আলুতে পচন

রাজশাহীতে হিমাগারগুলোতে রাখা আলুতে পচন ধরেছে। এতে হিমাগারে আলু মজুদ করে এখন পুঁজি হারাতে বসেছেন এ এলাকার আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এ জন্য হিমাগার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকেই তারা দায়ী করছেন।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার খাঁড়ইল গ্রামের বাণিজ্যিক আলু চাষি মতিউর রহমান বলেন, গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ছিল ১৭ টাকা। পরিবহন ও হিমাগারে এটা সংরক্ষণে কেজিপ্রতি আরও খরচ হয় ৭ থেকে ৮ টাকা। সে হিসাবে কেজিপ্রতি খরচ পড়েছে ২৩ থেকে ২৫ টাকা। বর্তমানে রাজশাহীতে পাইকারি বাজারে আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৮ টাকা। ফলে কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

একই উপজেলার মৌগাছি নন্দনহাট গ্রামের আলু চাষি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিক্রির জন্য সোমবার আমান এগ্রো হিমাগারে সংরক্ষণ করা ১০০ বস্তা আলু বের করি। বস্তা থেকে আলু ঢেলে হতবাক হয়ে যাই। প্রতিটি আলুতেই অনেক শিকড় গজিয়েছে। পাশাপাশি দাগ পড়েছে, কুঁচকে গেছে। বাজারে বর্তমান দামের অর্ধেকেও এসব আলু বিক্রি করা যাবে না। একে তো দাম কম। এরপর পচন ও শেকড় গজানোর জন্য আমার মতো অনেক চাষি ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন’।

তিনি অভিযোগ করেন হিমাগারের অব্যবস্থাপনার জন্য এমন ঘটেছে। তার মতে, ‘ঠিকভাবে বাতাস না দিলে, কিছুদিন পরপর আলুর বস্তা ওলটপালট না করলে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকলে এমন হয়’। ‘আমাদের অনেকটা জিম্মি করে হিমাগার মালিকরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।’ 

আলু চাষিদের দাবি, গত বছরও হিমাগারে আলু রেখে লোকসান গুনেছিলেন তারা।

তাদের অভিযোগ, বাজারে আলুর চাহিদা আছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে এর দাম পাচ্ছেন না তারা। অথচ প্রতিবছরই বিভিন্ন অজুহাতে আলুর ওজন কমান এবং ভাড়া বাড়ান হিমাগার মালিকরা।

আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। কৃষকরা আলু উৎপাদন করেছে, সেটা পচিয়ে ফেলে হিমাগার কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, তা হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ এত বেশি ভাড়া নিয়েও কৃষক ও ব্যবসায়ীর আমানত রক্ষা করতে পারেননি। প্রত্যেকটি হিমাগারেই আলু পচেছে। এর দায় হিমাগার কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। হিমাগারে রাখা আলু পচে গেলে, আলুতে শেকড় গজালে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নিতে হবে।

আমান এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক বলেন, বিভিন্ন কারণে আলু পচে বা শেকড় গজাতে পারে। আলু উঠানোর সময় তাপমাত্রা বেশি থাকলে, রোদে আলু রেখে দিলে, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আলু রাখলে, বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকলে। তিনি বলেন, চাষিরা আলুর ফলন বাড়ানোর জন্য জমিতে এক জাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহার করছেন। এ কারণেও আলু পচে বা শেকড় গজাতে পারে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, হিমাগারে আলু পচে যাওয়া, শেকড় গজানো এবং চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান হলে আগামীতে আলু আবাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর