শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
১০৭ বছরে কারমাইকেল কলেজ

মনে রাখতে হবে একাত্তরের শহীদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

নজরুল মৃধা, রংপুর

ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ ১০৭ বছরে পা দিয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও দিবসটি মনে রাখার চেষ্টা করছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এমনটা দাবি এই প্রজন্মের অনেকের। ১৯১৬ সালে ১০ নভেম্বর কুন্ডি ও কাকিনার জমিদার এবং তাজহাট মহারাজাসহ এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অনুদানে ৩০০ একর জমির ওপর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এই কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন ব্রিটিশ শাসিত বাংলার গভর্নর টমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল। তার নামানুসারে কলেজের নামকরণ করা হয় কারমাইকেল কলেজ। ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজে আই এ ও বি এ ক্লাস খোলার অনুমতি দেয়। সেই সময় থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য কলেজটির পঠন-পাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। এরপর ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

জার্মান নাগরিক ড. ওয়াটকিন ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ ২১টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন এ কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা হলেন উর্দু বিভাগের অধ্যাপক শাহ্ মোহাম্মদ সোলায়মান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহমান, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, গণিত বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায়, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কালাচাঁদ রায় ও তার স্ত্রী মঞ্জুশ্রী। একাত্তরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষার্থীরা হলেন খোন্দকার মুখতার ইলাহী চিনু, গোলাম গৌস নওশা, শরিফুল আলম মকবুল প্রমুখ।

এখানে লেখাপড়া করেছেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনীয়া, নজরুল গবেষক, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার শাহ আবদুল হামিদ, প্রখ্যাত ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই, ইংল্যান্ডের ল্যাংকাশায়াারের হিন্ডবার্ন সিটির সাবেক মেয়র আলতাফুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এম আবদুর রহিম,  চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন, বাংলাদেশের  প্রথম প্রধান বিচারপতি ও ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও তেভাগা আন্দোলনের নেতা মণিকৃষ্ণ সেনসহ অনেকেই।

কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও সাবেক ভিপি আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজকে আমরা চিরদিন স্মরণে রাখতে চাই। সেই সঙ্গে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব শিক্ষক- ছাত্র শহীদ হয়েছেন তাদেরও মনে রাখতে চাই। সে সব শহীদের জীবন উৎসর্গের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত।

সর্বশেষ খবর