বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ইসলামিক ফ্রন্টে ভাঙন

কেন্দ্রীয় কমিটির ১০১ জনের মধ্যে ৩০ জনের পদত্যাগ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভাঙনের কবলে পড়েছে আহলে সুন্নত মতাদর্শী রাজনৈতিক দল ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন দলের কাউন্সিল না হওয়া, শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যান্য অভিযোগ তুলে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নেতা। দলত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির অনেকে। এমন অবস্থায় চরম সংকটে পড়েছে দলটি। তবে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবায়ের বলেন, ‘দলের বিভিন্ন পদে থাকা কয়েকজন আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাই ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই ওই নেতারা এবং তাদের ভাবশিষ্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগের ফলে সংগঠনে কোনো সংকট তৈরি হবে না।’ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান এম আবু তৈয়ব চৌধুরী আশরাফি বলেন, ‘দলে মহাসচিবের বাইরে কারোর মতামতকে প্রাধন্য দেওয়া হয় না।

তাদের রাজনৈতিক দল চলানোর মতো দক্ষতা নেই। দলে কোনো শৃঙ্খলা নেই। তাই পদত্যাগ করেছি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা পদত্যাগ করবেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘মহাসচিব নিজেকে সুন্নি মতাদর্শী দাবি করলেও তার পরিবারের সদস্যরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী নিজেই জামায়াত নেত্রী। এ বিষয়গুলো জানাজানি হওয়ার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা ইসলামিক ফ্রন্ট ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’ আরেক পদত্যাগকারী কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম সোলায়মান ফরিদ বলেন, ‘দল পরিচালনায় গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিমতামতকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দলে রাজনৈতিক কোনো চর্চা নেই। এসব কারণে ইসলামিক ফ্রন্টবিমুখ হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। গণপদত্যাগ করছেন নেতারা। এরই মধ্যে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ৩১ জন পদত্যাগ করেছেন। আরও অনেক নেতা পদত্যাগ করতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’

জানা যায়, কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক বছর ধরে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলমান ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশে। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কাউন্সিল না হওয়া, দলে মহাসচিব মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবায়েরের স্বেচ্ছাচারিতা, শীর্ষ নেতাদের জামায়াত কানেকশনসহ নানান ইস্যুতে সে কোন্দল সম্প্রতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। সম্প্রতি দলের সিনিয়র মহাসচিব সোলায়মান ফরিদের পদ স্থগিত করলে প্রকাশ্যে রূপ নেয় কোন্দল। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসলামিক ফ্রন্টের নানা অনিয়ম নিয়ে সক্রিয় হন অনেক নেতা-কর্মী। এমনকি দলটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। সোলায়মান ফরিদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিবাদে ইসলামিক ফ্রন্টের বড় একটি অংশ সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ইসলামিক ফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন সিনিয়র নেতারা। এরই মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ৩১ জন পদত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান এম আবু তৈয়ব আশরাফি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম সোলায়মান ফরিদ, সাংগঠনিক সচিব (ঢাকা) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম রেজভী, অর্থ সম্পাদক শাহেদুল আলম রেজভী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এম এ সবুর, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এম রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, পরিবেশ ও পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম বাচ্চু, সহপরিবেশ ও পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক এম মহিউল আলম চৌধুরী, সহদফতর সম্পাদক এম নাঈমুদ্দীন অন্যতম। একইভাবে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও চলছে দলত্যাগের হিড়িক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর