শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ময়মনসিংহে

জাতীয় পার্টির দুই পক্ষের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে অনিশ্চয়তায় কর্মীরা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ময়মনসিংহে

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশাতেই জাতীয় পার্টি (জাপা) ভেঙেছে কয়েক দফা। তার মৃত্যুর পরও দলের সেই ভাঙন, দ্বন্দ্ব, মতবিরোধ আর কাদা-ছোড়াছুড়ি থামেনি। নেতৃত্ব আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যতই নিয়োগ-বিয়োগ হোক, এর প্রভাব কখনো পড়েনি ময়মনসিংহে। তবে রওশন-জি এম কাদের দ্বন্দ্বের জেরে এবার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ময়মনসিংহ জাপার রাজনীতিতে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো জেলা জাপার সভাপতির দায়িত্ব নেন বেগম রওশন এরশাদ। এ ছাড়া তিনি ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের এমপি। অন্যদিকে ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের এমপি ফখরুল ইমাম।

দলীয় সূত্র বলছে, কভিড পরিস্থিতি ও নিজের শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে দীর্ঘ সময় দলের কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত থাকেন রওশন এরশাদ। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গেল আগস্টে তিনি নিজে ও সাধারণ সম্পাদককে জেলার পদ থেকে সরিয়ে ডা. কে আর ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মোশাররফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর চক্ষু চিকিৎসক ডা. কে আর ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। মূলত রওশনের ডাকা জাতীয় সম্মেলনে কে আর ইসলামের নাম থাকায় বেজায় চটেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

জানা যায়, এরপর থেকেই দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ময়মনসিংহের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। গেল অক্টোবরের ২ তারিখ ডা. কে আর ইসলামকে জাপার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়। অব্যাহতি পাওয়া এই নেতা জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদেও ছিলেন। আর এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান রওশন দুর্গের নেতারা। পরে ১২ অক্টোবর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইমাম এমপিকে আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যের ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন দলটির চেয়ারম্যান। এর তিন দিন পর ফখরুল ইমাম এমপির সুপারিশে কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আহমেদকে মহানগরের আহ্বায়ক ও আবু মুছা সরকারকে সদস্য সচিব করে ১১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির  অনুমোদন দেন জি এম কাদের।

সব শেষ ১৯ নভেম্বর জি এম কাদেরকে প্রধান অতিথি করে রওশন এরশাদের বাসভবনের (সুন্দরী মহল) পাশে টাউন হল মাঠে দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রওশন অনুসারীরা কাদেরপন্থিদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে একই স্থানে কর্মী সম্মেলনের ডাক দেন রওশনপন্থিরা। যদিও পরে সম্মেলনের স্থান রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে হতে যাচ্ছে জানিয়ে নগরীতে মাইকিং করছেন কাদেরপন্থিরা। এসব নিয়েই রাজনীতির মাঠে এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে জাপা।

জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন (রওশনপন্থি) বলেন, “করোনা পরিস্থিতি ও অসুস্থতার কারণে দলের কার্যক্রমে ম্যাডামের অনুপস্থিত থাকার সুযোগে ফখরুল ইমাম ঢাকায় বসে একের পর এক ‘পকেট’ কমিটি দেন। ব্যক্তিগত প্রভাবে তার ‘অনুগত’ কমিটির কারণে নেতা-কর্মীরা দুই বলয়ে বিভক্ত হন। ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গুটিকয় প্রার্থী দিতে পারলেও সব শেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি।”

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘ম্যাডাম দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে তার কাছে কান ভারী করে দূরত্ব সৃষ্টি করে। আমি দলের চেইন অব কমান্ড মেনেই সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছি। এতে দোষের কিছু দেখি না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর