বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কবে হবে নতুন কালুরঘাট সেতু

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কবে হবে নতুন কালুরঘাট সেতু

কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে রেলওয়ে-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩০ সালে। প্রায় ৭২ বছর পর ২০০১ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। তবু সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচল করছে নানা ধরনের হালকা-ভারী যানবাহন। ঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়েই যাতায়াত করছে যানবাহনগুলো।

কিন্তু হবে হবে করে ২২ বছরেও নতুন করে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি। অথচ এই সেতু ব্যবহার করেই ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে সেতুটি না হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি অংশের মানুষের যাতায়াতে শেষ হচ্ছে না অন্তহীন ভোগান্তি। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পূর্ব পটিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, শহরের চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল।

জানা যায়, কালুরঘাট সেতুর বর্তমান দৈর্ঘ্য ৬৩৮ মিটার। এর স্প্যান সংখ্যা ১৯টি। ১৯৩১ সালে এটি ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে এর ওপর ইস্পাতের পাটাতন ও বিটুমিন ব্যবহার করে এ সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উপযোগী করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা জরাজীর্ণ সেতুটির সংস্কার করা হলেও এটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বর্তমান সেতুর পাশেই হবে আরেকটি সেতু। নতুন করে সেতুর নকশা তৈরির কাজ চলছে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। ৬৫ ফুট প্রস্থ ডবল ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং দুই লেনের সড়কপথ সুবিধাসহ থাকবে মানুষ চলাচলের জন্য দুই পাশে দুটি রাস্তা, আর ১২.৭ মিটার ভাটিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রেখে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এইচ এম মুজিবুল হক বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নে কেন দীর্ঘসূত্রতা কাজ করছে তা আমরা জানি না। সরকার পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পারলে কালুরঘাট সেতু কেন পারবে না। এর বিরুদ্ধে নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত। তবে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি একটাই, আমরা অনতিবিলম্বে কালুরঘাট সেতুর বাস্তবায়ন চাই। চট্টগ্রামবাসী কোনো অজুহাত শুনতে চায় না।’

কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নতুন সেতুর নকশা তৈরির কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হওয়ার আশা রাখি। এরপর ডিপিপি তৈরি করে তা একনেকে পাঠানো হবে। পরে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব দাফতরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২০২৩ সাল চলে যাবে। ২০২৪ সালে কাজ শুরু করার আশা রাখি।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুরনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে চলাচল করবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল। এ জন্য সেতুটি সংস্কারে গত বছর রেল কর্তৃপক্ষ বুয়েটের দ্বারস্থ হন। রেলের আহ্বানে বুয়েট সাড়া দিয়ে গত বছর ৯ অক্টোবর একটি বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করে। এরপর তারা সেতুর ত্রুটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে তারা ছয়টি ত্রুটির কথা উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের পরামর্শ দেয়।

এরপর বুয়েটের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের একাধিকবার বৈঠকের মাধ্যমে সমীক্ষার একটি সমঝোতা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ১২ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেছে। বুয়েটের সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেতুর সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করবে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, পুরনো কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালাতে বুয়েট সমীক্ষা চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের আগে সেতু মেরামতের কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলতে পারবে। প্রথম দিকে বেশি না হলেও প্রতিদিন একটি ট্রেন চলাচল করবে। সেতুটি মেরামতের পর ছোট মিটারগেজ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে।

সর্বশেষ খবর