রাজশাহীর আলু চাষিরা মৌসুমের শুরুতেই সার সংকটে পড়েছেন। সেই সঙ্গে সারের বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
চাষিরা অভিযোগ করেছেন, সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রায় দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। বিশেষ করে পটাশ সরবরাহ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। তবে ডিলাররা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চাহিদার অনুপাতে সারের কিছুটা সংকট আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নভেম্বর মাসে আলু চাষ শুরু হয়। এরই মধ্যে কেউ কেউ চাষ শুরু করেছেন। তবে অনেকে জমি প্রস্তুত করেই সারের অভাবে থমকে আছেন। আবার কেউ সার না পেয়ে চাষ বন্ধ রেখেছেন। চাষিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ৭৫০ টাকার পটাশ সারের ৫০ কেজির বস্তা এখন তাদের কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৫০০ টাকায়। এই অতিরিক্ত দামে সার কিনতে গিয়েও দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। তারপরও চাহিদা মতো সার মিলছে না। এতে আসন্ন রবি মৌসুমে আলুসহ অন্যান্য সবজি চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তানোর উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার আলু চাষি আফজাল হোসেন বলেন, আলু চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পুরোদমে রোপণ শুরু হবে। গত মৌসুমে স্টোরে ওভারলোড হওয়ায় কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। তবে সারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। সার সংকটের কারণে আলু চাষ করছেন না একই উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকার শরিফউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আলু চাষে অনেক খরচ, সার পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। খরচও অনেক। ডিলার ছাড়া কোনো মাধ্যমে পটাশ পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম, এবার একটুও করব না। জেলার বাগমারা উপজেলার চাষি মাহতাব হোসেন বলেন, ৭৫০ টাকার পটাশ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক খুচরা সার বিক্রেতা বলেন, আমাদের কিনতেই হচ্ছে বেশি দামে। তাই ১০০০-১১০০ টাকা বস্তা হিসেবে বিক্রি করে থাকি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের সার ডিলার নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দের পটাশ সার মূলত ৭৫০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে, সেটা একেবারে ভিত্তিহীন। তবে মোটা একটা পটাশ পাওয়া যায় যেটি সরকারি বরাদ্দ নয়, বেসরকারি। এগুলো বাইরে কিনতে পাওয়া যায়। এটির দাম অনেকে বেশি নিচ্ছেন বলে শুনেছি।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, অনেকেই সার বেশি ব্যবহার করে। তাদের কথা বিবেচনায় আমরা পটাশ সারের অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আমরা বরাদ্দও পেয়েছি। কিন্তু যেখান থেকে বরাদ্দ নিতে হবে, সেখানে সিরিয়াল জটিলতার কারণে সার আসতে একটু সময় লাগছে। তবে এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো সার এলে কৃষকদের আর সমস্যা হবে না। এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, ‘সার যা পেয়েছি এতে সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সারা দেশে একই সঙ্গে সারের চাহিদার কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে একটু সমস্যা হচ্ছে। ফলে সংকটও দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কেউ কেউ বাড়তি দামে সার বিক্রি করছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডে (সিইউএফএল) অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে সার কারখানার বয়লারে এ ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার কারণে সার কারখানার উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামত কাজ শেষে আবার উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সিইউএফএল সূত্রে জানা যায়, গতকাল কারখানার দক্ষিণ প্রান্তে অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের রিফর্মার পাইপ ফেটে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কারখানার নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও পাশের কাফকো সার কারখানার একটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কারখানার কর্মীরা বলেন, রিফর্মার পাইপ লাইনটি পুরান হওয়ায় ফেটে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এটি আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংস্কার করলে এ ঘটনা ঘটত না।