মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পাবনার সেই ৩৭ কৃষকের বাড়িতে তদন্ত দল

বসুন্ধরা গ্রুপের আইনি সহায়তায় জামিন

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার সেই ৩৭ কৃষকের বাড়িতে তদন্ত দল

পাবনার ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী গ্রামের আলোচিত ৩৭ ঋণখেলাপি কৃষকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত দল বিষয়টি পর্যালোচনা করতে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করছেন। এর আগে গ্রেফতার ১২ জনসহ ৩৭ কৃষক ২৭ নভেম্বর জামিন পান। কৃষকদের পক্ষে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালিত করতে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় তদন্ত কমিটির তিন সদস্য এবং সমবায় ব্যাংক পাবনা শাখার কর্মকর্তারা ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহারের বাড়ি যান। এ সময় উপস্থিত কৃষক আবদুস সামাদ, মজনু প্রামাণিক, আতিয়ার রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। পরে কমিটির সদস্যরা ঋণ খেলাপে অভিযুক্ত কৃষকদের বাড়ি যান। তারা কৃষকদের কাছে জানতে চান ঋণের টাকা কেন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের রসিদ আছে কি না এবং কার কাছে কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার আগে ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধে কোনো নোটিস দিয়েছে কি না। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ডিজিএম (পরিদর্শন) আহসানুল গণির নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দলের সদস্যের মধ্যে ছিলেন উপব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আবদুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ঋণ) আমিনুল ইসলাম রাজীব।

ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে কারাভোগের শিকার কৃষকরা বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ কৃষকই সব টাকা পরিশোধ করেছি। তার পরও কেন আমাদের তিন দিন কারাগারে থাকতে হলো? এ দায়ভার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।’ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

কৃষক আবদুল হান্নান বলেন, ‘৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লভ্যাংশসহ পরিশোধ করেছি। এর পরও কারাগারে যেতে হয়েছে! এজন্য ব্যাংক কর্মকর্তারা দায়ী। যদি ঋণ পরিশোধ না করে থাকি, তবে কেন আমাদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিস পাঠানো হলো না? উকিল নোটিস পাঠালেই জানতে পারতাম ঋণ পরিশোধ হয়নি। কোথায় সমস্যা রয়েছে, সেটা আমরা দেখতাম। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা না করে সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিল। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?’

ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহার বলেন, ‘ব্যাংকের মাঠকর্মীরা এসে কৃষকের কাছ থেকে কিস্তি গ্রহণ করেছেন। কিস্তির টাকা মাঠকর্মীরা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন কি না তা আমি জানি না। ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির একটি মামলা করেছে। আমি সেই মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছি। ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা হয়েছে তা আমি জানতাম না। এমনকি মামলার আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষকদের ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো নোটিসও দেয়নি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মহির মন্ডল বলেন, ‘এলাকার ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার বিষয়ে কোনো কৃষক আগে জানত না। ঋণ পরিশোধের জন্য কৃষকদের নোটিস দেওয়া হয়নি। এ তদন্ত নামকাওয়াস্তে ছাড়া আর কিছুই না।’

উপস্থিত তদন্ত কমিটির প্রধান আহসানুল গণি তদন্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা আছে- গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক দলগতভাবে একটি সমবায় সমিতির মাধ্যমে সমবায় ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংক। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে স্থানীয় থানা পুলিশ ২৫ নভেম্বর ১২ কৃষককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।

বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক শামসুজ্জামান ১২ কৃষকসহ ৩৭ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে আইনি সহায়তা দেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। বসুন্ধরা গ্রুপ পরে এসব কৃষককে খাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর