সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

♦ এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা ♦ প্রতিরোধে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

তাপমাত্রার ওঠানামায় চোখ রাঙাতে শুরু করেছে ডেঙ্গুজ্বর। চলতি বছরের ২৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৪৫ জন। গত বছর এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৬২০ জন, মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন। গত বারের তুলনায় এর মধ্যেই দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি গতবারের তুলনায় আরও খারাপ হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বাড়তি ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। এ বছর যাতে ফের স্যালাইন সংকট না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বৈঠক করেছে। ওষুধটির স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালে ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বারের তুলনায় আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে এ বছর ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঢাকার চেয়ে বেশি খারাপ হবে। কারণ গত বছর সারা দেশে এডিস মশা ছড়িয়ে গেছে। মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞদের চাপে ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ঢাকার বাইরে তো কিছুই করা হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরও মৌসুমের আগে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। মশার বংশবিস্তারের উৎসে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তবে ঢাকার বাইরে উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যেন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা যায় সে প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো দেরিতে চিকিৎসা শুরু করা। ঢাকার বাইরের রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ছোটাছুটি করতে গিয়ে বেশি খারাপ হয়ে যায়।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে রেকর্ড পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সে বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এরপরে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু প্রকোপ আকার ধারণ করে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখেরও বেশি মানুষ, মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন। এরপরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের ২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় ও মারা যায়।

এ ব্যাপারে ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে হচ্ছে। ডেঙ্গু এখন আর শহরের রোগ নেই, সারা দেশেই এটি ছড়িয়ে গেছে। সবাই তো জানি এডিস শত্রু মশা। তাই মশা নিধন করতে হবে, নিজেকে মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়া যাবে না, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তীব্র পেটে ব্যথা, বমি, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং নাক, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারি থেকে মশক নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছি। এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত সামগ্রী কিনে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির মাসব্যাপী অভিযানে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ১৬টি মামলায় ২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে জনগণকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, ইমাম, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় সভা এবং র‌্যালি করা হয়েছে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ওষুধ প্রয়োগ করা, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা জরুরি। ছাদে, বারান্দায়, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলোতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর