বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত যখন সিলেট দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল তখন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা ছিলেন নিষ্ক্রিয়। বড় পদবিধারী নেতাদের বেশির ভাগই ছিলেন ‘হাওয়া’। তবে একদিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল মিছিল ও সমাবেশের। এর বাইরে একদিন নেতা-কর্মীরা অংশ নেন গায়েবানা জানাজায়। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতারোধে দলের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কঠিন সময়ে মাঠে ছিলেন না বেশির ভাগ সংসদ সদস্য। দলীয় পাঁচ এমপির মধ্যে তিনজনকে এখনো দেখেননি এলাকার মানুষ। জানা গেছে, ১৮ জুলাই থেকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী আখালিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় জামায়াত-শিবির। এই সংঘর্ষ সুবিদবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টায় কারফিউ জারির আগ পর্যন্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) সামনে থেকে সুবিদবাজার পর্যন্ত ছিল রণক্ষেত্র। ওই এলাকায় শিবিরের অনেক মেস ও ছাত্রাবাস থাকায় দলটির নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। ১৮ জুলাই ছাত্রলীগ শাবি ক্যাম্পাসের দিকে অগ্রসর হতে গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে। টিকতে না পেরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাও পিছু হটতে বাধ্য হন।
১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরের কালেক্টরেট মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মসজিদ থেকে কিছু দূর যাওয়ার পরই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। হাসপাতালে তিনি মারা যান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত (কারফিউ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত) কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকা ছিল বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দখলে। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর করা হয় সিলেট প্রধান ডাকঘরের দরজা-জানালা ও গাড়ি। কারফিউ জারির পূর্ব পর্যন্ত সিলেট শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং শাবির পার্শ্ববর্তী এলাকা জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ওই সময় সিলেটের কোথাও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধে নামতে দেখা যায়নি। ১৯ জুলাই টুকেরবাজার এলাকায় সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি দলটি।
জানা গেছে, সংকটময় এই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা ছিলেন ‘রিলাক্স’। পাঁচ সংসদ সদস্যের মধ্যে ওই সময় এলাকায় ছিলেন দুজন। সার্বক্ষণিক এলাকায় ছিলেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। শফিকুর রহমান চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট আসেন এবং রবিবার পর্যন্ত অবস্থান করে ঢাকায় ফিরেন। হাবিবুর রহমান হাবিব আন্দোলনকালীন পুরো সময় ছিলেন তার নির্বাচনি এলাকায়। ১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৪ আসনের ইমরান আহমদ ও ৬ আসনের নুরুল ইসলাম নাহিদ ছিলেন ঢাকায়। গতকাল দেশে ফিরেছেন ড. মোমেন। এলাকায় ফিরেননি ইমরান ও নাহিদ। মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ১৮ জুলাই মিছিল ও জমায়েত করেছি।