শিল্প কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যৌথ বাহিনীর টিম চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরবে, একটা স্বস্তি কাজ করবে।
গতকাল রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে সেনাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খানের সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। বৈঠকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নেতা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের শিল্প কারখানাগুলোর বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যাগুলো নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবুর রহমান, সেনাবাহিনীর টাস্কফোর্স কমান্ডার কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিজিবি ও র?্যাব প্রতিনিধিরাও বৈঠকে ছিলেন।
এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শিল্পখাতের নিরাপত্তার জন্য যৌথ বাহিনীর একটা টিম চাই। সেখানে সব বাহিনীর সদস্যরা থাকবে। এটা করা গেলে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরবে, একটা স্বস্তি কাজ করবে। এ ছাড়া যে কোনো মূল্যে ঢাকা চট্টগাম মহাসড়ককে নিরাপদ রাখতে হবে। কারণ চট্টগ্রামবন্দর দিয়ে ৯৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। এ সড়কের নিরাপত্তায় আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি এবং রপ্তানি কোনোভাবে ব্যহত না হয়। কোনো ধরনের সময় ক্ষেপণ না হয়। কনটেইনার জট না হয় এসব বিষয়ে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি। স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। জাতির এ কান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ব্যবসায়ীরা সব শক্তি দিয়ে কাজ করবে। আমরা সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগস্থাপনকারী হিসেবে কাজ করছি। আমাদের ব্যবসা ঠিক থাকলে দেশ ঠিক থাকবে। অর্থনীতি ঠিক থাকলে দেশ ঠিক থাকবে। অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য আমরা একসঙ্গে আছি। ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করলে এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। আশা করি, পুলিশ বাহিনীর যারা রয়েছেন তারা দ্রুত কাজে যোগ দেবে। এলাকাভিত্তিক ওয়াটসঅ্যাপ খুলতে হবে। এত দ্রুত শিল্পের সমস্যা সমাধান করা যাবে। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় যেন কোনো ব্যাঘাত না হয়।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের পোশাক শিল্প কারখানাসহ সব শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শিল্পাঞ্চল নিরাপত্তা জোরদরার করতে হবে। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুর এলাকার ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ কারখানা, সাভার-আশুলিয়া এবং ধামরাই এলাকায় ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কারখানা, নারায়ণগঞ্জ, ডিএমপি, চট্টগ্রাম এলাকায় শতভাগ পোশাক কারখানা খুলে গেছে।’ বৈঠকে মেজর জেনারেল মঈন খান বলেন, এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে শিল্পকারখানাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। ‘কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সেও’ মাধ্যমে দ্রুত ঘটনাস্থলে টিম পৌঁছে যাচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা দিচ্ছে। যার কারণে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় অভিযোগের সংখ্যা প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে কমে গেছে। ঝুট ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যেসব দল মাঠে তৎপর রয়েছে, তাদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য মঈন খান বিজিএমইএ নেতাদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আর একটিও কারখানা যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা শিল্প পুলিশ দেখবে। সাভারের জিওসি বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হবে, যাতে কোনো শিল্প কারখানা সমস্যায় পড়লে দ্রুত সে সমস্যার সমাধান করা যায়।
এদিকে বিজিএমইএর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পোশাক শিল্প অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চলগুলোতে গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে আসছে সন্ত্রাসের ঘটনা। ঝুট সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী দল, যারা ওইসব এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি করে এলাকার পরিবেশ অশান্ত রাখছে।