আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন রাজশাহীর শতাধিক জনপ্রতিনিধি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে। ফলে কর্মস্থলে ফেরেননি বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি। এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সবাই না, কেউ কেউ আছেন। রবিবার প্রথম অফিস শুরু হলো। আমরা খবর নিচ্ছি। যদি এরকম হয়, তারা তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে আমরা সেখানে লিখব।’
জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে। নগর ভবনে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি তার বাড়িতেও অগ্নিকা ও লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ১৪, ১৭, ১৯ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। আরও কয়েকজন কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই আত্মগোপনে চলে যান অধিকাংশ কাউন্সিলর।
রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের এমপিদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সাবেক এমপিদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বাদ যায়নি তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। রাজশাহী-ঢাকা সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় গাড়িতে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গ্যারেজে থাকা দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনিও আছেন আত্মগোপনে।
একই অবস্থা গোদাগাড়ী, তানোর, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, পবা, মোহনপুর, বাঘা, চারঘাট এবং বাগমারা উপজেলা ও পৌরসভার। এসব উপজেলা ও পৌরসভার মেয়র-চেয়ারম্যানদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে আছেন। ফলে এসব এলাকার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। জেলার বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান এখনো আত্মগোপনে। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ফিরে আসছেন সেবা না পেয়ে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই আত্মগোপনে আছেন। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা। সেনাবাহিনী কিংবা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল জানান, জনপ্রতিনিধিরা যাতে নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিতে হবে। বিতর্কিতদের বিষয়টি আলাদা। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের অনেকে ভালো কাজ করেন। একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ার কারণে তারা যেন লাঞ্ছিত না হন, সেদিকটি খেয়াল রাখতে হবে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, জনপ্রতিনধিদের একটি বড় অংশ এখনো অফিসে আসেননি। তারা না থাকলেও একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছেন। তারাও ফাইল নিষ্পত্তি করতে পারবেন।