অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। ইউজিসির দুই সদস্যও ছুটি নিয়েছেন। এরই মধ্যে ঘটে গেছে তুঘলকি কান্ড। ছাত্রদলের দুই ক্যাডারকে ডেকে এনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ ও জোর-জবরদস্তি করে চাপের মুখে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানকে বদলি করা হয়েছে। আর সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে কয়েকজনের পেছনে থাকা ড. ফখরুল ইসলামকে। অথচ এই ফখরুল ইসলাম গত মাসেও শেখ হাসিনার স্তুতি গেয়ে গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে নিয়েছেন বিভিন্ন সুবিধাও। এসব বিষয় নিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আতঙ্কে অফিসে আসেন না অনেক কর্মকর্তা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর রাতারাতি তিনি ভোল পাল্টেছেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়া সচিবের পদ বাগিয়ে নেওয়া ফখরুল ইসলাম ও উপপরিচালক ড. মহিবুল আহসানের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ইউজিসিতে ছাত্রদল ক্যাডারদের ডেকে আনেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অত্র প্রতিবেদক জানতে চাইলে দুজনই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা এসব ছাত্রদল নেতাকে চেনেন না বলেও দাবি করেন।
সচিব হিসেবে নতুন পদায়ন পাওয়া ফখরুল ইসলামের থেকে জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক পরিচালক বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে, আমি সচিব হলে আমার রুম ভাঙচুর করা হবে। এ শঙ্কা থেকে আমাকে সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়নি। চাপের মুখে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা কর্মকর্তাকে সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে সব সুবিধা নেওয়া কর্মকর্তারাই এখন এসব করছেন বলে দাবি করেন তিনি।’
জানা যায়, ইউজিসিতে বর্তমানে পূর্ণকালীন চেয়ারম্যান নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। এর মধ্যে তাকে চাপে ফেলে আরও প্রায় ১৮-২০ জনকে বদলি করার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দাপ্তরিক কাজ বাদ দিয়ে নতুন সচিবের নেতৃত্বে প্রতিদিন এসব কাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন কতিপয় কর্মকর্তা। নতুন সচিব ফখরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মহিবুল আহসান, নাজমুল ইসলাম, মনির উল্লাহ, আকরাম আলী খানসহ কয়েকজন নিয়মিত মিটিং করেন। বদলি/পদায়নের জন্য আরও চাপ আসার তথ্য পেয়ে দপ্তরে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন ইউজিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর।
এদিকে সরকার পতনের পর রাতারাতি বিএনপি-জামায়াতের সংখ্যা বেড়েছে ইউজিসিতে। ভোল পাল্টেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করা এবং বিভিন্ন সময় বিদেশ ট্যুর করা ব্যক্তিরাও। গত সরকারের আমলে একাধিক প্রমোশন পাওয়া ব্যক্তিরাও এখন নিজেদের বঞ্চিত বলে দাবি করছেন।
বহিরাগত ছাত্রদল ক্যাডারদের নেতৃত্বে ও ইউজিসি কর্মকর্তাদের চাপে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সচিব পদে পদায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউজিসির কর্মকর্তাসহ রুমে বেশ কয়েকজন লোক ছিল। তাই কারা ছাত্রদলের তা বলতে পারছি না। আর অসুস্থতাজনিত কারণে গত দুই দিন অফিস করতে পারছি না। এদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কেউ অনৈতিক সুবিধা দাবি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে’। তবে ইউজিসির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।