প্রভাবমুক্ত ব্যাংক কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন ব্যাংকার সমাজ। ব্যাংক কমিশনের মাধ্যমে ব্যাংকের সঠিক চিত্র তুলে আনার মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। এ খাতের দুর্বলতা সারিয়ে তুলতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সচেতন ব্যাংকার সমাজ আয়োজিত ‘ব্যাংক খাত সংস্কার : আমাদের করণীয়’ সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এ সময় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক অর্থ সচিব ইউনুসুর রহমান ও এম আসলাম আলম, এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি আবদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ প্রমুখ।
সাবেক অর্থ সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, সরকার ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক কমিশন করার সময় মামলা-মোকদ্দমা হবে। এ জন্য যেন আইন করে উচ্চ আদালতে একটি ভিন্ন বেঞ্চ গঠন করা হয়। তা না হলে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। সাবেক আরেক অর্থ সচিব এম আসলাম আলম বলেন, ব্যাংক কমিশন গঠন করা অনেক বড় কাজ। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। স্বাধীন নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকের চিত্র নিরূপণ করে ব্যাংক কমিশনের পথে এগোতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে যে লুটপাট হয়, সেখানে যারা বোর্ডে থাকেন বা ফোনে হুমকি দেন, নির্দেশ দিয়ে লুটপাট সম্পন্ন করেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের ধরা যায় না।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ইসলামী মূল্যবোধ ধারণ করেন, এমন লোককে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান করতে হবে। ব্যতিক্রম হলে মেনে নেওয়া হবে না। বিগত সরকারের সময়ে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না, উল্লেখ করে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শ্রীলঙ্কা পারেনি, পাকিস্তান পারেনি, ঘানা পারেনি, আমরাও পারব বলে আশা করতে পারি না।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, সরকারের কাছে দাবি তোলার জন্য রাস্তায় চিৎকার না করে লিখিত আকারে বা গণমাধ্যমের মাধ্যমে দাবি জানাতে হবে। আজকের মুক্ত অবস্থার জন্য অনেকে জীবন দিলেন। কী পেলাম বা না পেলাম, এ নিয়ে যেন আক্ষেপ করলে হবে না। আমরা কথা বলার মতো একটি মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি আবদুল হক বলেন, ইসলামী ব্যাংক বন্ধ করার জন্য বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংক বন্ধ করার মতো আত্মঘাতী উদ্যোগ যেন না নেওয়া হয়, তা নিয়ে সে সময়ের গভর্নর আতিউর রহমানকে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি সেটা বুঝেছিলেন। গভর্নরের নিজের কিছু করার ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ বলেন, এখনকার ব্যাংক খাতের অবস্থার জন্য দায়ী রাষ্ট্রযন্ত্র। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাত থেকে একটি পরিবারের হাতে চলে গিয়েছিল। তার নির্দেশে সবকিছু হতো। মূল প্রবন্ধে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুযোগ নিতে সুদখোর, ঘুষখোররা ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে। তারা নিজেরাই ইসলামী জীবনযাপন করে না, ইসলাম বোঝে না।