রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট গত ১৫ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। দোকান বরাদ্দের নামে নয়ছয় ছাড়াও চাঁদাবাজি ছিল ওপেন সিক্রেট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে টাকা আদায় হয়েছে। অবৈধ দোকান মালিকদের বৈধতা দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হলেও মেলেনি বৈধতা। কমপ্লেক্সে দোকান বরাদ্দের নামে চলে বাণিজ্য। কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি একসময়ের ফুটপাতের জুতা বিক্রেতা আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে মার্কেটটিতে দখলদারি চলে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, মহানগর হকার্স মার্কেট, আদর্শ হকার্স মার্কেট ও গুলিস্তান হকার্স মার্কেট নিয়ে ২০০৪ সালে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। শুরু থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এর কার্যকরী সভাপতি ছিলেন আফজাল হোসেন। ২০০৫ সালের ২৩ মে মার্কেটের সদস্যসংখ্যা ২ হাজার ৩৭০ অনুমোদন করা হয়। এরপর ছলচাতুরী করে ২০১৪ সালে ৫৯১টি দোকান বাড়িয়ে সেই সংখ্যা ২ হাজার ৯৬১ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০০৮ সালে আফজাল, মোজাম্মেল হক মজু, নাজমুল, জহিরুলসহ কয়েকজন মিলে কথিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দেখিয়ে ৫৯১ জনকে অতিরিক্ত দোকান মালিক হিসেবে দক্ষিণ সিটিতে তালিকা দেন, যার প্রায় সবই ছিল সাজানো। ২০১১-১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাম ভাঙিয়ে মহানগর হকার্স, গুলিস্তান হকার্স ও আদর্শ হকার্স মার্কেট থেকে ৩০টি দোকান হস্তগত করেন আফজাল ও তার ঘনিষ্ঠরা। ওই ৩০ জনের অধিকাংশের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট থেকেও তারা ১৭৫টি দোকান নিয়েছেন একাধিক প্রভাবশালীর নাম ভাঙিয়ে। যার মধ্যে এখান থেকে ২০টি দোকান (চার মার্কেট মিলে ৫০টি দোকান, কিশোরগঞ্জের মালিক) আবদুল হামিদের লোকজন পাবেন বলে বলা হয়। সিটি করপোরেশনে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে জমা দিয়ে ৫৯১ জন দোকান মালিকের স্বীকৃতি পান। পরে এসব দোকান ৩০-৪০ লাখ টাকা করে অন্যদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর ও দক্ষিণ) : এ দুই মার্কেটে বৈধ দোকান ছিল ১ হাজার ২৪৫টি। এর বাইরে আন্ডারগ্রাউন্ড, লিফটসহ মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে নকশাবহির্ভূত ৭০০ দোকান বানান সাবেক এমপি আফজাল গং। তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের নাম করে দোকানপ্রতি ৭ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় দোকান মালিক সমিতি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য করে তারা। এখনো ৭০০ মালিক কোনো কাগজপত্র পাননি।
আফজাল হোসেনের সম্পদ : বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে লুটপাটের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের চারবারের এমপি আফজাল হোসেন। আশির দশকে গুলিস্তানের ফুটপাতে বাবার সঙ্গে ঝাঁকায় করে জুতা বিক্রেতা আফজালের গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে এখনো জুতার দোকান রয়েছে। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম এমপি হন। এরপর তাঁর ব্যবসা বাড়ে। এখন দেশের ৩০ স্থানে তাঁর আফজাল সুজের শোরুম রয়েছে। সেগুনবাগিচায় আছে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট। সিদ্দিকবাজারে ছয় তলা বাড়ি। দক্ষিণ বনশ্রীতে ছেলে সাঈদ হোসেনের নামে পাঁচ তলা বাড়ি। আশুলিয়ায় আছে শত কোটি টাকার জুতার কারখানা।
এ বিষয়ে কথা বলতে আফজাল হোসেনের সেগুনবাগিচার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসার স্টাফরা বলেছেন, সরকার বদলের পর হত্যাসহ একাধিক মামলা হওয়ায় আফজাল হোসেন আত্মগোপনে আছেন। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।