সরকারি-বেসরকারি অফিসে, বিয়ে-শাদিসহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সর্বত্র ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিক বোতল। বাস, প্লেন, রেল ও লঞ্চেও খাবার পানির জন্য শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল। এ ছাড়া বাচ্চাদের টিফিন বক্স ও খাবার পানির বোতলও প্লাস্টিকের। বাসায় খাবার টেবিলে কাচের জগের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের জগ। বিভিন্ন দোকান ও বাজারে বিক্রি হওয়া তেল এবং কোমল পানীয় বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিক বোতলে।
দামে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘদিন ব্যবহারর করতে পারায় দেশের বেশির ভাগ মানুষই এখন প্লাস্টিকের বোতল ও পাত্র ব্যবহার করছে। ফলে জীবনের প্রতিটি পদে মানুষ প্লাস্টিকের জালে জড়িয়ে পড়ছে। এতে খাবারের সঙ্গে মানুষ কখনো না কখনো প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে। আর এর মাধ্যমেই প্লাস্টিক বোতল ডেকে আনছে সর্বনাশ।
প্লাস্টিক শুধু স্বাস্থ্য নায়, পরিবেশের জন্যও সর্বনাশ ডেকে আনছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্লাস্টিকের প্রভাবে মানুষের ক্যান্সার, অ্যাজমা, অটিজম এবং হরমোনজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগ হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যরে মাধ্যমে যে শুধু যে নদীনালা ও খালবিল ভরাট হচ্ছে তা নয়, এর ফলে পরিবেশের আশপাশেও বিষ ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত করোনা মহামারির পর দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকসামগ্রীর ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়েছে। আর ব্যাপকভাবে প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলার কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলীর মতো প্রধান নদনদীগুলো এখন দূষণে জর্জরিত। ছোট ছোট নদনদী, শাখা নদী, খাল এমনকি শহরের জলাবদ্ধতার জন্যও এ প্লাস্টিক বোতল দায়ী।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিকসামগ্রী বিশেষ করে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যমুক্ত করতে সবার আগে সরকারি দপ্তরগুলোয় প্লাস্টিকর বোতল ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানা গেছে, এরই অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্লাস্টিকের বোতলজাত খাবার পানি বন্ধ করা হয়েছে। এর বদলে এখন পানিপানের জন্য কাচের জগ ও গ্লাস ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্যোগে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এটি অনুমোদন দেন। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কার্যকরভাবে প্লাস্টিক বোতলমুক্ত এলাকা।
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নো প্লাস্টিক ইন ন্যাচার : অ্যাসেসিং প্লাস্টিক ইনজেসশন ফ্রম ন্যাচার টু পিপল’ শীর্ষক এক গবেষণা সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন খাবার বিশেষ করে পানীয়র সঙ্গে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। তবে সবচেয়ে বেশি তারা পানীয় জলের সঙ্গে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। আর প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়ার অর্থ ধীরে ধীরে মৃত্যুঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাওয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের মাধ্যমে যে প্লাস্টিক বর্জ্য মানবশরীরে প্রবেশ করে তা ধীরগতিতে বিষক্রিয়া চালায়। সাধারণত কিডনি, লিভারের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশে ক্যান্সারের প্রবণতা এ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সৃষ্ট রাসায়নিকের কারণেই হচ্ছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)-এর সেক্রেটারি জেনারেল শাহরিয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার যেহেতু বাড়ছে, এর বর্জ্যরে পরিমাণও বাড়ছে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের ‘সিঙ্গেল ইউজ’-এর পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত সিঙ্গেল ইউজে যে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় তা রিসাইকেল করা যায় না। এর ফলে এ প্লাস্টিক বর্জ্য নদী, খাল-বিল ও জমি-সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।