দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ২৫ পরিবার। ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। গ্রামের বেকার যুবকদের টার্গেট করে প্রথমে লিবিয়া পাঠানো হয়। তারপর সেখানকার স্থানীয় দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দালালরা যুবকদের মরুভূমিতে আটকে রেখে নির্যাতন করে। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। যারা দাবি করা টাকা দিতে পারে তাদের নির্যাতন কম করা হয় এবং মাঝেমধ্যে কিছু খাবারও দেওয়া হয়। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয়, তাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। সাত থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কোনো খাবার দেওয়া হয় না তাদের।
লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েক যুবক দেশে ফিরে এসেছেন। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের রফতানি গ্রামের মাহিন মিয়া, রাহুল মিয়া, আশরাফ মিয়া, হুসাইন মিয়া, রুবেল মিয়া, বায়জিদ মিয়া ও সোহাগ মিয়া; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের আরফান মিয়া, অহিদ মিয়া ও হান্নান মিয়া; একই ইউনিয়নের মাছমা গ্রামের শামীম মিয়া, মোহাম্মদ হুসাইন ও সাব্বির মিয়া; লালুয়ারটুক গ্রামের খায়রুল মিয়া, মামুন মিয়া, মুক্তার হোসেনসহ ২৬ যুবক গত তিন বছরে চার দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
প্রবাসে জেল খেটে অনেকেই ফিরে এলেও অনেকেই লিবিয়ার বিভিন্ন দালালের হাতে আটক হয়ে অমানবিক জীবন পার করছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।
মামুন, রাহুল, মাহিন, সুমন, আসাদ, খায়রুল, দেলোয়ার, অহিদ ও আজহারুল শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ প্রবাসে জেল খেটে দেশে ফেরত আসতে সক্ষম হয়েছেন।
লিবিয়ায় আটক তফসির ও তাকবিরের বাবা এনামুল হক বলেন, ‘আমার দুই ছেলেরে ফরহাদ ও তার সাথের দালালরা ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে অনেক টাকা নিয়েছে। বাড়ি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে জানি না। আমার ছেলেদের ফেরত চাই।’
লিবিয়ায় আটক মিজবা উদ্দিনের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেরে লিবিয়ার মাধ্যমে ইটালিতে পাঠানোর কথা বলে ১১ লাখ টাকা নিছে। এখন আমার ছেলে দালাল ফরহাদের হাতে বন্দি আছে। আরও টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দিবে। কিন্তু টাকাও দিতে পারি না ছেলের কোনো খবরও পাই না।’ লিবিয়ায় আটক যুবক জহিরুল ইসলামের বাবা মো. রাহান উদ্দিন বলেন, ‘ছেলেকে ৭০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে লিবিয়ায় নিছে। দুই মাস রেখে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে।