মাদক পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে রংপুর। মাঝে মধ্যে মাদক বহনকারী ধরা পড়লেও মূল ব্যবসায়ীরা রয়ে যাচ্ছেন অধরা। প্রায় প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পরও থামানো যাচ্ছে না রমরমা এ ব্যবসা। গত এক মাসে কমপক্ষে ১৫টি মাদকের চালান ধরা পড়েছে র্যাব, পুলিশের হাতে। এনিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল।
গত বুধবার রংপুরের কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশনে বিশেষ অভিযান চালিয়ে লালমনিরহাট হতে সান্তাহারগামী মেইল ট্রেন থেকে সাড়ে ৩ কেজি গাঁজাসহ এক বৃদ্ধ দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ওই দম্পতির পোশাক দেখে কারও মনে হবে না তারা মাদক ব্যবসায়ী। আটক বৃদ্ধ দাড়ি, টুপি, পায়জামা, পাঞ্জাবি পরিহত ছিলেন। স্ত্রীর পরনে ছিল বোরকা। তারা পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার রহিমপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৬৫) ও তার স্ত্রী মোছা. বেবি খাতুন (৫৫)। গত ১৫ অক্টোবর র্যাব-১৩ এর পৃথক অভিযানে ৬৮০ বোতল ফেনসিডিল ও ৭২৯ পিস বুফ্রেনরফিন অ্যাম্পল ইনজেকশনসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক লালমিনহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। পরে ওইসব মাদকদ্রব্য রংপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ছাড়াও তিস্তার চর এলাকায় চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। চর এলাকায় গিয়ে অনেকে মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক বহন করে শহরের বিভিন্ন মাদকসেবীর হাতে তুলে দেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ফেনসিডিল উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেখানকার কারখানায় উৎপাদিত ফেনসিডিল বিভিন্ন সীমান্ত গলিয়ে দেশে প্রবেশ করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাটের সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া মাদক প্রথমে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় প্রবেশ করে। পরে শহর হয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের সীমান্ত গলিয়ে সড়ক পথে রংপুর নগরীতে মাদক আসে। এসব মাদকের একটি উল্লেখযোগ্য স্থানীয়রা সেবনের জন্য ব্যবহার করছে। বাদবাকি পাচার হয়। এ ছাড়াও দিনাজপুরসহ আরও একাধিক রুট দিয়ে রংপুরে মাদক প্রবেশ করছে।
সূত্রমতে, মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে ছোটবড় মিলিয়ে কমপক্ষে ২ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে ১৫/২০ জন মাদকের বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। মাদক বহনকারীরা ধরা পড়লেও পাচারের সঙ্গে যুক্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।