রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলছে জমি দখলের হিড়িক। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জমি দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেলওয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। তবে উচ্ছেদ করার বেশ কয়েকদিন পর আবারও তা দখলে মরিয়া স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। রেলওয়ের জমি দখলে স্থানীয়দের পাশাপাশি যোগসাজশ রয়েছে রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। অনেকে আবার টাকার বিনিময়ে দখল করিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলওয়ে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে তা ফের দখল হয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮১১.২৯ একর ভূমি দখল করে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। রেলের এ বিশাল মূল্যবান জমি বছরের পর বছর অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকার কারণে দখলে উৎসাহ পাচ্ছে দখলদাররা।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর আকবরশাহ থানার কৈবল্যধাম আশ্রম সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পাশেই স্টিলের স্ট্রাকচার দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। গত এক মাস আগে পাবেল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এটি গড়ে তোলেন। একইভাবে পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেলের উচ্ছেদকৃত জায়গায় দোকান নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খানের নেতৃত্বে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। পাহাড়তলী বাজারের মাদ্রাসা রোডের শওকত খান রাজু নামে আরেক যুবদল নেতা গড়ে তুলেছেন অবৈধ স্থাপনা। এ বিষয়ে আশরাফ খানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। অন্যদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইডব্লিউ অফিসের অতিরিক্ত ওয়াক্স সুপার ভাইজার হিসেবে কর্মরত ইমরুল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে রেলওয়ের জায়গা দখল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দখলদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ দাবি করেন তিনি, অর্থ পেলেই কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আবার যেসব দখলদারদের কাছ থেকে সাড়া পান না তাদের উচ্ছেদ করার চিঠি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরুল দাবি করেছেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য এস্টেট ডিপার্টমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট শাখায় ৮-১০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিলে আমার কিছু করার নেই।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জায়গার বিষয়টি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবি দেখবে। আমরা স্টেশনের ভিতর ও আশপাশের বিষয়গুলো দেখব।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে উচ্ছেদ করা এবং আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। উচ্ছেদের পর তা দখলে রাখার দায়িত্ব রেলওয়েসহ অনান্য ডিপার্টমেন্টের। নিজেদের দখলে রাখার জন্য রেলওয়ে বাউন্ডারি ওয়ালসহ নানা পদক্ষেপ নিতে পারে এ বাজেট আছে। রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ২৪৪৪০.৯৩ একর। তার মধ্যে ১৫০৩১.৩১ একর জমির মধ্যে রেলওয়ে অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ৪৯৭১.৯১ একর জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়েছে রেলওয়ে। লিজ ও দখলের বাইরে অব্যবহৃত ভূমি রয়েছে ৩৬২৬.৪২ একর। অবৈধ দখলদারদের হাতে পূর্বাঞ্চলের ৮১১.২৯ একর দখল হওয়া জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, বস্তি, মার্কেট ও ক্লাবসহ নানা স্থাপনা।