রংপুর অঞ্চলের কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে হুমকিতে পড়েছে কৃষিজমি, পরিবেশ ও কৃষকস্বাস্থ্য। এ অঞ্চলে কৃষিজমির স্বাস্থ্যের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। জমিতে যে পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করলে জমির স্বাস্থ্য রক্ষা হবে, সে পরিমাণ জৈব পদার্থ ব্যবহার হচ্ছে না। একটি স্বাস্থ্যসম্মত জমিতে ৫ শতাংশ জৈব সারের প্রয়োজন হলেও রংপুর অঞ্চলের জমিতে এক থেকে দেড় শতাংশ জৈব পদার্থ রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের জমিগুলো এখনো স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে হলে কৃষককে আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছে কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সুষম সারের ব্যবহার বাড়াতে পারলে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে আশা কৃষিবিদদের।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর। এর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। সাধারণত ৪৫ শতাংশ খনিজ বা মাটির কণা, ৫ শতাংশ জৈব এবং ২৫ শতাংশ করে পানি ও বাতাস থাকা মাটিকে সুষম মাটি বলা হয়। একটি আদর্শ জমিতে জৈব পদার্থের মাত্রা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থাকা অতিপ্রয়োজনীয় হলেও এ অঞ্চলের বেশির ভাগ জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ থেকে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে।
অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপকহারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। একই জমিতে যুগের পর যুগ একই ফসলের চাষ, জমিকে বিশ্রাম না দেওয়া, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেওয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষিজমি হুমকিতে পড়ছে।
কৃষিবিদদের মতে রংপুর অঞ্চলের জমিতে জৈব পদার্থ অনেক কম রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটির প্রাণশক্তি আরও বাড়াতে হলে জৈব সারের ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে; সেই সঙ্গে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।
কৃষিবিদদের মতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কৃষক কীটনাশকজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। চোখ জ্বালা, ত্বকে ফোসকা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, প্রজননজনিত সমস্যা, স্নায়বিক জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময় ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা উত্তরণে কৃষকের জন্য খামারি অ্যাপ খোলা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে কৃষককে সুষম সার ব্যবহারের পরার্মশ দেওয়া হচ্ছে।