পুরান ঢাকার আদালতপাড়া প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জনা এবং দুর্গন্ধের কারণে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ চরম অসুবিধার মুখে পড়ছেন। এতে শুধু আদালতের মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, জনস্বাস্থ্যের জন্যও এটি হুমকিস্বরূপ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা সিএমএম আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং ঢাকার জেলা জজ আদালতের প্রাঙ্গণ ও করিডরজুড়ে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি আদালতের সামনের পরিবেশও একই অবস্থা। বিশেষ করে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের চতুর্থ তলায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের জেনারেল রেকর্ডিং শাখার (জিআর সেকশন) পাশে লিফটের সামনে ময়লার স্তূপ দেখা গেছে। এই স্থানটি সাধারণ মানুষের চলাচলের প্রধান রুটে অবস্থিত। ফলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা প্রতিদিন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকের অভিযোগ, ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধের কারণে সেখানে দাঁড়িয়ে বা চলাফেরা করাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। দুদকের আইনজীবী তরিকুল ইসলাম জানান, আদালতের টয়লেটগুলো বেশ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। কেউ ব্যবহার করলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় আদালতে থাকা সত্ত্বেও বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রাম বা প্রয়োজনীয় সুবিধা নেই। এ ছাড়া অনেক টয়লেট ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তালাবদ্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন না।
সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা বলেন, এমন নোংরা পরিবেশ দেশের ন্যায়বিচারের মর্যাদার সঙ্গে যায় না। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা যেখানে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করতে আসছেন, সেই স্থানটিই ভয়াবহ দুর্গন্ধ ও ময়লার স্তূপে ভরা।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব রয়েছে। ধারা ৯ অনুযায়ী, যদি জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এমন অবস্থা তৈরি হয়, সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আদালতের সামনের ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ স্পষ্টভাবে এই আইন লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া উচ্চ আদালত নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনা দেন। তবে বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। সচেতন নাগরিকরা আশা করছেন, উচ্চ আদালতের প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে, যাতে আদালত প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয়। এটি শুধু জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য নয়, দেশের ন্যায়বিচারের মর্যাদা রক্ষার জন্যও জরুরি।