৪ জুলাই, ২০২০ ১০:২৫

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কমছে মৃত্যুর সংখ্যা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কমছে মৃত্যুর সংখ্যা

এপ্রিল এবং মে মাসের মতোই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর হার ৭৫% এরও কম। এর সে সময় দৈনিক গড়ে ৩ হাজার জনের বেশি মারা গেছে সারা আমেরিকায়। আর এখন মৃত্যুর সংখ্যা ৭ শ’রও নীচে। 

কেমন এমন হচ্ছে-সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুরুতে সকলের মধ্যে এক ধরনের আতংক সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে সিট না থাকায় রোগীরাও দুর্বল হয়ে পড়েন। অনেকে সিট না পেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়েছেন। আর এখন সকলেই করোনাকে জয় করার সংকল্প নিয়ে মনোবল দৃঢ় করেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলমূল বেশী খাচ্ছেন। গরম পানিসহ বিভিন্ন পানীয় পান করছেন ব্যাপকভাবে। স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করছেন ঘরে-বাইরে। 

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এখন করোনা টেস্টিংয়ের কোন সমস্যা নেই। যেখানে-সেখানে বিনামূল্যে টেস্ট করার পর নিজ নিজ অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ এবং পথ্য গ্রহণ করছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বর্তমানের সংক্রমণকে কতিপয় রাজনীতিকের আচরণের জন্যেও দায়ী করেছেন। 

পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে এপ্রিল-মে মাসে আক্রান্তদের ৭% থেকে ৮% পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আর এখন সে হার হচ্ছে ৫% এরও কম। 

জানা গেছে, এখন সারা আমেরিকায় দৈনিক ৬ লাখ মানুষের টেস্ট হচ্ছে। আগে এটি ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ। যদিও টেস্টিংয়ের হার আরো বেশী হওয়া দরকার বলে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা বলেছেন। সংক্রমণ-বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমনও অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন যাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হবার আলামত দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাই টেস্ট করা হলে সেটি নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা করা যায় অথবা আইসোলেশনে গেলেও সংক্রমিত হবার শংকা কেটে যায়। 

করোনা নিয়ে পর্যবেক্ষণরত সংস্থা ‘কোভিড ট্র্যাসিং প্রজেক্ট’ জানায়, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যাপারেও ডাক্তার, নার্সদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। জরুরী বিভাগে চাপ কমেছে। এপ্রিল-মে মাসে জরুরী বিভাগে ৬০ হাজারের বেশী রোগীর আগমণ ঘটলেও এখন সে সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।  ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ড. টাইসন বেল এ প্রসঙ্গে বলেন, চাপ কমে যাওয়ায় হাসপাতালগুলো গুরুতরভাবে অসুস্থদেরকেও টেনশন মুক্তভাবে সেবা দিতে পারছেন। 

এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয় ৫৫ হাজার ৫৯৫ জন। একক কোন দিন এটি হচ্ছে সারাবিশ্বে এযাবতকালের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে ব্রাজিলে ১৯ জুন ৫৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড গড়েছিলো। সেটি ভাংলো যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার মারা গেছে ৭২২ জন। এ অবস্থায় ২৬ স্টেটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আগে যারা স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহারের বিপক্ষে ছিলেন, সে সব স্টেট গভর্নররা এখন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন মাস্ক বাধ্যতামূলক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা, আরিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বেশকটি স্টেটে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট এবং বারে ভেতরে বসে খাবারের যে অনুমতি ছিল, তাও প্রায় সকল স্টেটই বাতিল করেছে। নিউইয়র্ক সিটিতে সোমবার থেকে বার, রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাবারের অনুমতি দেয়ার কথা ছিল। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি বাতিল করা হয়েছে। সে স্থলে রেস্টরেন্টের বাইরে চেয়ার টেবিল বসানোর অনুমতি দিয়েছে সিটি প্রশাসন। একই ব্যবস্থা করা হচ্ছে নিউজার্সি স্টেটেও। এভাবেই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেছে ম্যাসেচুসেট্স, পেনসিলভেনিয়া, দেলওয়ারে, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগানসহ বিভিন্ন স্থানে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর