সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

নাটোরে বিনা হালে রসুন চাষ

নাটোরে বিনা হালে রসুন চাষ

নাটোরের মাঠে মাঠে বিনা হালে রসুন চাষের ধুম পড়েছে। গত কয়েক মৌসুমে ব্যাপক লোকসান হওয়ায় কৃষকেরা রসুন চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে গত মৌসুমে কিছুটা লাভ হওয়ায় চাষীরা বর্তমানে আবারো স্ত্রী-পুত্রদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপকহারে রসুন চাষে ঝুঁকেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নাটোর জেলায় মোট ১৬ হাজার ৯৬ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে বড়াইগ্রামে ৫ হাজার ৭৬২ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৭ হাজার ২৮৪ হেক্টর, নাটোর সদরে ১৬৩০ হেক্টর, সিংড়ায় ৬৭৫ হেক্টর, লালপুরে ৫৫৫ হেক্টর ও বাগাতিপাড়ায় ১৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ রসুন চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর কৃষকেরা স্ব-উদ্যোগে বিনা হালে রসুন চাষের প্রচলন করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। চলনবিল অঞ্চলের জমিতে সাধারণত কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে নরম জমিতে বিনা চাষে রসুনের কোয়া লাগানো হয়। এ জন্য প্রচলিত নিয়মে জমি চাষ করার প্রয়োজন পড়ে না। এ পদ্ধতিতে আগাছাও কম জন্মে এবং সারের ব্যবহারও কম করতে হয়। এছাড়া ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, রোগবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা স্বাভাবিক রসুনের মতই। রোপণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত ১২০ দিনের এই অগ্রিম রবি মৌসুমের রসুন উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে পুরনো পদ্ধতির রসুন চাষের চেয়ে অনেক কম। উপরন্তু এ পদ্ধতিতে রসুনের ফলনও বেশি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২৫-৩০ মণ।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ ও ১৫ কেজি জিপসাম ছিটানোর দুই-একদিনের মধ্যে নরম জমিতে সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপণ করতে হয়। রোপণের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে ২ মণ রসুনের প্রয়োজন হয়। জমিতে রসুন রোপণের দিনই খড় বা বিচালী দিয়ে জমি ঢেকে দিতে হয়। বীজ রোপণের একমাস পরে পানি সেচ দিয়ে বিঘায় ১০ কেজি হারে ইউরিয়া ও ৫ কেজি হারে এমওপি ছিটিয়ে দিলে ফলন ভালো হয়। জালশুকা গ্রামের রসুনচাষী খোরশেদ আলম পূর্ণি বলেন, এবার লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে অন্যান্য বছরের মত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসতে পারছে না। তাই সংকটের কারণে শ্রমিকের মজুরি বেশি। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তবে দামটা একটু বেশি পেলে পুষিয়ে যাবে বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোরের উপ-পরিচালক রহমতুল্লাহ সরকার বলেন, দোঁ-আশ ও এঁটেল দোঁ-আশ মাটি রসুন চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এ কারণেই নাটোর জেলায় বিশেষ করে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায় সর্বাধিক জমিতে রসুন চাষ হয়। এ বছরও এ এলাকায় রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে তিনি জানান।

 

 

সর্বশেষ খবর