রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হল অলৌকিক খেজুরগাছটি!

রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হল অলৌকিক খেজুরগাছটি!

অবশেষে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হল সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতার কাশিবাটি গ্রামের অলৌকিক খেজুরগাছটি। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ গাছটি কেটে ফেলে। রবিবার সকালে দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত ভক্ত অলৌকিক খেজুরগাছটি না দেখতে পেয়ে হতাশায় ফিরে যাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০-২৫ দিন আগে খেজুরগাছটির পুকুরের পানিতে ওঠা-নামার বিষয়টি মানুষের চোখে পড়ে। প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকে পরেরদিন দুপুর দেড়টার মধ্যে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আস্তে আস্তে পুকুরের পানির মধ্যে ৫-৬ ফুট পরিমাণ খেজুরগাছটির মাথা নুয়ে পড়ত এবং বেলা দেড়টার পর থেকে আবারও আস্তে আস্তে গাছটি রাত ১২টার মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়াত। ঘটনাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে এ অলৌকিক দৃশ্য দেখার জন্য মানুষের ভিড় জমে।

এক পর্যায়ে পুকুরটিকে বাঁশের চটা দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। অনেকেই রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন আশা পূরণের জন্য পুকুরের পানি পান করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে থাকে। কেউ কেউ খেজুর গাছের শেকড় দিয়ে মাদুলি বানিয়েও পরতে শুরু করেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ওই স্থানে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। মাহফিলে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে আসেন নলতা ঘোড়াপোতার মাওলানা আদর আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব। কিন্তু, তার বক্তব্যের বেশির ভাগ রাজনৈতিক হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাকে বাধা দিলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একপর্যায় স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে সহিংসতার আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় লোকজন খেজুরগাছটি শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কেটে নিয়ে যান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কে বা কারা সুক্ষভাবে খেজুরগাছটির পাতার ভেতর দিয়ে রশি দিয়ে বেধে গাছটির মাথা নোয়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। এভাবেই নিয়ম করে রোজ লোকচক্ষুর আড়ালে গাছটির মাথা টেনে নোয়ানো এবং আবার ছেড়ে দেওয়া হত। খেজুরগাছটির গোড়া চিকন হওয়া ও পুকুরের পাড় ভেঙে গাছটির গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সহজেই এ কাজটি করা যেত। এছাড়া ঘটনার শুরুর দিকে পুকুরের পানিতে রাতের আধারে ফিটকিরি দিয়ে পানি পরিস্কার করা হয়। পরে প্রচার করা হয় গাছটি ও পুকুরের পানির অলৌকিকত্ব। লোকসমাগম বাড়তে থাকলে সেখানে আয়োজন করা হয় ওয়াজ মাহফিলের। আর সেখানে দেওয়া হয় রাজনৈতিক বক্তব্য।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহসীন আলী জানান, সামনের যেকোনো দিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আপিলের রায় প্রকাশ হতে পারে। তাই খেজুরগাছের অলৌকিক রহস্যকে কেন্দ্র করে উপস্থিত অসংখ্য লোকের ভিড়ে জামায়াত-শিবির তথা দুর্বৃত্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। এর আগে চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা গেছে বলে সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়। সে কারণে পুলিশ ফোর্স নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শনিবার রাত ১টার দিকে খেজুরগাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।

এদিকে, খেজুরগাছের রহস্যকে কেন্দ্র করে ২০-২৫ দিনে ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও বেশ কিছু ব্যক্তির মাঝে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে এলাকায় বসবাসকারী অসংখ্য পরিবারের মাঝে। কারণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আর্থিক অনটনের মধ্যে খেজুরগাছ দেখার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-অনাত্মীয়রা ভীড় করছিল ওই এলাকায়। প্রতিটি পরিবারে অতীত-মেহমান লেগেই ছিল।

সর্বশেষ খবর