রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

প্রেমনগর বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা গোয়ালঘরে

প্রেমনগর বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা গোয়ালঘরে

রাজনগর উপজেলায় ঘুর্নিঝড়ে এক বিদ্যালয়ের ঘর উড়িয়ে নেওয়ায় গোয়ালঘরসহ তিন বাড়িতে চলছে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস।

উপজেলার কামারচাক ইউপির খাস প্রেমনগর গ্রামে চলছে প্রেমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই পরীক্ষা ও পাঠদান।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ৩০ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে এলাকার মো. মশাহিদ মিয়ার বাড়ির দুটি কামরা ও বারান্দায়। চতুর্থ শ্রেণীর ৫১ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে ফজর আলী ফুরকানিয়া মাদ্রাসায়। অন্যদিকে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস চলছে স্থানীয় মসজিদে। তৃতীয় শ্রেণীর ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা চলছে মাসুক মিয়ার গোয়ালঘরে, ঘরের একদিকে রয়েছে খড়।

দুপুর ১২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ৫৬ জন ছাত্রছাত্রী মাসুক মিয়ার গোয়ালঘরে ও প্রথম শ্রেণীর ৫৬ জন ছাত্রছাত্রী ফজর আলী মাদ্রাসায় ক্লাস করেছে। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে চাঁদা তুলে ৪০ হাজার টাকার টিন এনে বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে ঘর পুনঃনির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম ১ টন চাল দেওয়ার কথা বলেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ২ মাসের ভেতর ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানের সাথে দেখা করলে তিনি জানিয়েছেন ফাইল প্রসেস হলে সহযোগিতা করবেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরত্ব হলেও এ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার দুরবস্থা দেখতে শুধুমাত্র নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির খান ব্যতীত কেউই আসেননি। এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেছি একটু কষ্ট করে পাঠদান চালিয়ে যাবার জন্য, লেখালেখি করেছি মাসদুয়েকের ভেতর ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা হবে।

উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত এই এলাকায় গতকাল শনিবার ছাত্রছাত্রীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলাকালিন সরজমিনে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মৃত আমির আলী ৫৩ শতক ভূমিতে এলাকার গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪৩ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন চারজন। প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মশরফ আলীও চার মাস আগে  মারা যান।

গত ডিসেম্বর মাসে সরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা থেকে তিনজনের একটি তদন্তদল উক্ত স্থানের মাটি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। কিন্তু গত ৪ এপ্রিল ঘুর্ণিঝড়ে ঘরের চালসহ ঘর দুমড়ে মুছড়ে একাকার করে দেয়। এলাকার লোকজন টিন ও ঘরের আসবাবপত্র কুড়িয়ে এনে স্তূপ দিয়ে রেখেছেন। এরপর থেকেই বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যবস্থা।

সর্বশেষ খবর