বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মুহিত যাচ্ছেন না, সুনামগঞ্জের নৌকাবাইচ স্থগিত

মুহিত যাচ্ছেন না, সুনামগঞ্জের নৌকাবাইচ স্থগিত

অবশেষে বন্যার মধ্যে সুনামগঞ্জে আয়োজিত নৌকাবাইচ উত্সবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যাচ্ছেন না। ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতি এই নেৌকাবাইচ উত্সবের আয়োজন করেছিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নেৌকাবাইচ উত্সবস্থলের মঞ্চ নির্মানের তোড়জোড় চলছিল। মাইকিং সম্পন্ন হয়েছিল। জেলাজুড়ে ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছিল। কিন্তু বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মুখে এই ধরণের নেৌকাবাইচ উত্সব স্থগিত করা ও অংশগ্রহণ না করার জন্য গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন- এ পীর হাবিবুর রহমানের একটি কলাম ছাপা হয়েছিল। সেখানে মানবিক কারণে মানুষের আকাঙ্খা-অনুভূতিকে লালন করে বন্যা দুর্গত মানুষদের সমস্যা সমাধান করার পর যে কোন সময় এই উত্সব আয়োজনের অনুরোধ জানানো হয়।

জানা যায়, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখাটি পড়ার পর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সময়ে এ ধরণের উত্সবে যোগদান না করতে অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জেলার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অর্থমন্ত্রীকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার পর পরবর্তী একটি দিনক্ষণ নির্ধারণ করে আমরা আপনাকে নিয়েই একটি বর্ণাঢ্য নেৌকাবাইচ উত্সবসহ সুনামগঞ্জের সকল মহলকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাই।

বাস্তবতা উপলব্ধি করে অর্থমন্ত্রী নিজেও নেৌকাবাইচ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনুরোধ গ্রহণ করেন। ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতি ও স্থানীয় প্রশাসনকে তার যোগদানের ব্যাপারে অপারগতা জানিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলের মধ্যেই আয়োজকরা আজকের নেৌকাবাইচ উত্সব স্থগিত ঘোষণা করে দেন। বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনকেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বিষয়টি জানিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতির সভাপতি বিএনপি-জামায়াত জমানার কুমিল্লার ডিসি ও বর্তমান যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান আগস্ট মাসেই এই নেৌকাবাইচ উত্সবের আয়োজন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সুনামগঞ্জ সদরের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ শোকাবহ আগস্ট মাসে এই ধরণের উত্সবের ব্যাপারে সম্মতি না দিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ৪ সেপ্টেম্বর দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়। তখন বন্যা পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও আগস্ট মাস এবং বন্যা পরিস্থিতির মুখে নেৌকাবাইচ আয়োজনে নারাজ ছিলেন। তবুও অতি উত্সাহী ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতির সভাপতি আমলা মিজানুর রহমান নেৌকাবাইচের আয়োজন করেন। নানামহলকে ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকেও সম্মত করান। স্থানীয় জেলা পরিষদ প্রশাসকের সঙ্গে মিজানুর রহমানের আগাগোড়াই যোগাযোগ ছিল। বিশেষ অতিথির তালিকায় জেলার সংসদ সদস্য ও তার সঙ্গে সুনামগঞ্জ পেৌর মেয়রকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নেৌকাবাইচ উত্সবকে সফল করতে জেলাজুড়ে চাঁদাও তোলা হয়।

জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুল আলম তালুকদার জুনু মিয়া আজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল থেকে তারা বড় সুসজ্জিত নেৌকা ভাড়া করেছিলেন। চাপের মুখে তাদেরকে এটি করতে হয়েছিল। এমনকি তাদের বাজেটের তিন লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল যেখানে জামালগঞ্জের অনেকেই আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, জেলাজুড়ে এভাবেই সরকারি আমলা হওয়ার সুবাদে ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রতিটি উপজেলায় প্রভাব খাটিয়েছিলেন নেৌকাবাইচের জন্য চাঁদা তুলে নেৌকা নিয়ে আসতে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজকের কর্মসূচি বাতিল করায় সুনামগঞ্জের সকল মহলই সন্তোস প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ খবর