শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

নওগাঁয় ভণ্ড কবিরাজের চিকিৎসার নামে প্রতারণা

নওগাঁয় ভণ্ড কবিরাজের চিকিৎসার নামে প্রতারণা

আধুৃনিক চিকিত্সার যুগে নওগাঁর মহাদেবপুরে এক ভণ্ড কবিরাজ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় মাজারে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সমাজের নিম্নবিত্ত সাধারণ রোগীদের ঝাড়-ফুঁ ও জ্বীন ধরেছে, বান মেরেছে এমন কথা বলে মারপিট করে ভণ্ড কবিরাজ স্বপন। প্রতিদিনই ভণ্ড কবিরাজ স্বপনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতে দেখা যায় স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাগণের। সেই সাথে তারা মোটা অংকের বিনিময়ে সুযোগ সুবিধা নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, হঠাৎ করে বছর দুই আগে মহাদেবপুর উপজেলার খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে ভণ্ড কবিরাজ স্বপন মাজার শরিফের জ্বিন ও মানসা (ভূত-পেত্নী) তাড়ানোর নামে ঝাড়-ফুঁকের ব্যবসা খুলে বসেন। প্রথম পর্যায় একটি চক্রের মাধ্যমে দিয়ে এ প্রতারণা চিকিৎসা শুরু করে। এর বছর খানেক পর স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এ চিকিৎসার খবর ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন অঞ্চলে। এরপর প্রতিদিন সকালে ছুটে আসা শত শত সাধারণ মানুষদের ঝাড়-ফুঁ দিয়ে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আর চিকিৎসার নামে করা হয় রোগীদের মারপিট। এমন এক ঘটনার ভুক্তভোগী নিতাই মাঝি। নওগাঁ সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের জ্বরে আক্রান্ত নিতাই মাঝিকে চিকিৎসার জন্যে কবিরাজের কাছে গত ২৪ অক্টোবর নিয়ে আসে নিতাই মাঝির পরিবার। এরপর সে মারা যায়।

নিতাই মাঝির স্ত্রী সবিতা ও ছেলে আদিত্য জানান, মানসা ধরেছে বলে প্রথমে অসুস্থ নিতাই মাঝিকে চোখ মুখে জোরে জোরে পানি দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর ভণ্ড কবিরাজ স্বপন বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট শুরু করে। এতে নিতাই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থার বেগতি দেখে কবিরাজ পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্য হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু চিকিৎসার অর্থ না থাকায় তাকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। পরের দিন দুপুরে বিনা চিকিৎসায় মারা যান নিতাই।

পার্শ্ববর্তী মান্দা উপজেলার মধ্যে মৈনম ইউনিয়নের জাগরিব গ্রামের সাহেরা বেগম জানান, তার ছেলের স্ত্রী বিজলী বেগমকে তাদের বাড়িতে চিকিৎসার নামে চুলের মুটি ধরে টেনে হেঁচড়ে হাতের উপর পা তুলে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

কথিত স্বপন কবিরাজ নিজেকে পল্লী চিকিৎসক দাবি করে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তবে নিতাই মাঝিকে মারপিট করার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ছাড়াও রোগীদের মারপিট করা ও টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোজাফফর হোসেন জানান, অসুস্থ নিতাই মাঝিকে মারপিট করা হয়। এতে নিতাই মাঝি অসুস্থ হলে পরে চিকিৎসা অভাবে মারা যান। ওই ভণ্ড কবিরাজ চিকিত্সার নামে রোগীদের মারপিট করেন।

জেলার পার্শ্ববর্তী মৈনম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ওই ভণ্ড-প্রতারক স্বপন কবিরাজ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ সকল অপকর্ম করে আসছে। প্রতিদিনই স্বপন কবিরাজ বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুলিশ আড্ডা দেয়।

ভণ্ড কবিরাজের চিকিৎসা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় মারপিট ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, নিতাই মাঝি মারা যাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিডি-প্রতিদিন/৩ অক্টোবর, ২০১৪/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর