শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

খাল ভরাট করে মার্কেট পানিবন্দী বহু মানুষ

খাল ভরাট করে মার্কেট পানিবন্দী বহু মানুষ

নরসিংদীর রায়পুরায় পানিবন্দী একটি পরিবার

নরসিংদীর চরসুবুদ্ধি গ্রামে সরকারি খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। এ ছাড়া ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী দুর্ভোগ পোহালেও সমস্যার প্রতিকারে প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদী। সেই নদীতে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের যে সরকারি খাল তা দখল করে নিয়েছেন রতন ও ওসমান নামের দুই ব্যক্তি। তারা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে খাল ভরাট করে গড়ে তুলেছেন পোলট্রি ফার্ম ও পাকা মার্কেট। মার্কেট ভাড়া দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে মাসে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।  এতে করে চলতি বর্ষায় চরসুবুদ্ধি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে প্রবেশমুখে সড়কে কোমর সমান পানি। অধিকাংশ বাড়ি পানির নিচে। ফলে ঘরের ভিতর ইটের ওপর কোনোরকমে চুলা বানিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। অনেক পরিবার শুধু শুকনো খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছে। গৃহিণী অজিফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সব কিছু পানিতে ডুবে গেছে, রান্না করতে পারছি না, ঈদে ছেলে-মেয়েদের ভালো কিছু রান্না করেও খাওয়াতে পারিনি। ইসলামপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী শামীমা ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা জানায়, আকস্মিক জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে গেছে। দুঃখ করে একই গ্রামের বিল্লাল মিয়া বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায়ও এ গ্রামে এরকম ভয়াবহ জলাবদ্ধতা হয়নি।  গ্রামের অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে লেবু ও পেয়ারার চাষ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পানি জমে থাকায় তাদের পেয়ারা ও লেবু গাছের গোড়ায় পচন ধরেছে। পেয়ারা চাষি আলামিন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে পেয়ারা গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এই বার মনে হয় পেয়ারা বিক্রি করতে পারব না। পেয়ারা বিক্রি করতে না পারলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে পুরোপুরি। পানিতে ভেসে একাকার মানুষ, গরুর মল। বাধ্য হয়ে এই পানিতে চলতে গিয়ে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের হয়েছে চর্ম রোগ, ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি। বসতঘরসহ সব জায়গায় পানি থাকায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা হয়ে পড়েছেন আতঙ্কিত। ওই গ্রামের জাকির হেসেন বলেন, এলাকার সব পরিবার ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে আতঙ্কে আছে। অগোচরে কোনো বাচ্চা যদি পানিতে পড়ে যায় বাঁচতে পারবে না। গ্রামের মসজিদ পানিতে ডুবে থাকায় সেখানে নামাজ পড়তে পারছেন না মুসল্লিরা। ইমামের ঘরেও হাঁটু পানি। মসজিদের ইমাম মৌলভী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি মসজিদের ভিতর পর্যন্ত চলে আসায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজটুকুও আদায় করতে পারেননি এলাকার অধিকাংশ মানুষ। জানা যায়, সম্প্রতি মানব পাচারকারী হিসেবে গ্রেফতার দুলাল খাল দখলকারী রতন মিয়ার ছেলে। তাদের ছত্রছায়ায় কালভার্টের এক মাথায় আহাম্মদ হোসেন ও অন্য মাথায় জাকির হোসেন মাটি ভরাট করে টিনের ঘর তুলে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। দখলদার রতন মিয়া বলেন, আমার কেনা জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করেছি। সামনে একটি খাল ছিল। রাস্তার সঙ্গে হওয়ায় এই জায়গাটুকু আমি ভরে পেছন দিক দিয়ে খালের জায়গা রেখেছি। সরকারি খাল অনুমতি ছাড়া কেন ভরেছেন জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবদুল মোমেন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার আগেই এখানে খাল দখল করে মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখল উচ্ছেদ করতে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া বক্স কালভার্ট করে গ্রামের পানি নিষ্কাশন করার জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর