শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে ‘আধা নিবিড়’ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ

বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে এখন সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধা নিবিড় (সেমি ইন্টেন্সিভ) পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে অধিক উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। অল্প জমিতে অধিক উৎপাদনের ফলে দিন দিন এই চাষ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। মৎস্য বিভাগ বলছে এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে শুধু বাগেরহাটেই বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। প্রযুক্তির মাধ্যমে অক্সিজেন, ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কারণে সম্পূর্ণ ভাইরাস ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এই পদ্ধতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সাধারণ চাষের তুলনায় মুনাফার পরিমাণ অধিক হওয়ায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি  জেলায়ও এ পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে। মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় চিংড়ি চাষিরা জানান, বিগত ২০১২ সালে বাগেরহাট সদর উপজেলার খাড়াসম্বল এলাকায় তিন বছর ধরে ৪০ একর জায়গায় ২২টি পুকুর খনন করে এর মধ্যে ১৮টি পুকুরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করে ফাহিম এ্যাকোয়া পার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একর প্রতি যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদন ছিল দুই থেকে আড়াইশ কেজি চিংড়ি সেখানে বর্তমানে এই আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে একর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কেজি। চাষের ধারাবাহিকতায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদন ও বিপণন করে প্রতিষ্ঠানটি দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এমনকি এ পদ্ধতির চিংড়ি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। ফাহিম অ্যাকোয়া পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হাসান পান্না বলেন, তাদের প্রকল্পে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার কেজি বাগদা উৎপাদন হয়। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আধা নিবিড় পদ্ধতিটি হচ্ছে স্বল্প জমিতে অধিক চাষ। যাকে ইংরেজিতে সেমি ইন্টেন্সিভ বলা হয়। এই পদ্ধতিতে মাত্র কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমান সনাতন পদ্ধতিতে এই জেলায় উৎপাদিত ২৮ হাজার ৩০০ টন চিংড়ি উৎপাদনের রেকর্ড সহজেই ভেঙে দেওয়া সম্ভব। যেহেতু সনাতন পদ্ধতিতে ঘেরে চিংড়ি চাষের জন্য অধিক জমির প্রয়োজন হয়, সে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তাই স্বল্প জমিতে পুকুর কেটে এ পদ্ধতির চাষ বেশ সুবিধা ও লাভজনক। আধুনিক এই চাষ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়বে একই সঙ্গে এই খাতে বাগেরহাট জেলা থেকে বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এজন্য ক্ষুদ্র চাষিদের সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে মাত্র এক বছরের মধ্যে বাগেরহাটে চিংড়ি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর