মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাকালুকি তীরের লক্ষাধিক মানুষের নেই ঈদআনন্দ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

হাকালুকি তীরের লক্ষাধিক মানুষের নেই ঈদআনন্দ

হাকালুকি হাওর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কিলা (কেমনে) থাকতাম, আফালে (বাতাসে সৃষ্ট বড় বড় ঢেউ) বাড়ি ঘরর মাটি ছাড়াইয়া (ধুয়ে) লইয়া (নিয়ে) যারগি (যাচ্ছে)। বন্যার আড়াই মাস পার অই গেছে (অতিক্রম করেছে), বাড়িঘর থাকি  (থেকে) পানি নামলেও রাস্তাঘাট পানির তলে (নিচে) আটাচলার (চলাচলের) কুনু (কোনো) উপায় নাই। আর ঈদ ... এভাবেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বললেন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা গ্রামের রেজিয়া, রেশমা, সবুজ, কানেহাত গ্রামের রফুল মিয়া, চান মিয়া, রজাক,  চিলারকান্দি গ্রামের সমছু মিয়া, বশির মিয়া, জুনাব আলী, মখতই। তাদের কথায় ফুটে ওঠে যেন গোটা হাওর তীরের মানুষের ঈদ আনন্দের চিত্র। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের মানুষ স্মরণকালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যার কারণে বিশেষ করে রোজায় মানুষের ভোগান্তিও যেন শেষ ছিল না। রোজা শেষ হলেও এখানে মানুষের কাছে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। স্থানীয় লোকজনের মতে, এবার বন্যা শুরু হয়েছে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে। জৈষ্ঠ্য মাসে এর তীব্রতা এতই বেশি যে, বাড়িঘরে বন্যার পানি ওঠে। এখন আষাঢ়। বন্যার পানি ঘর থেকে নামলেও বাড়ির চারপাশে এখনো পানি। চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা।  হাওর তীরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও  জয়চন্ডী। সরেজমিন দেখা যায়, ৩১ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভুকশিমইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী। ২১টি গ্রামের ছোট বড় শতাধিক রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের মানুষ নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারেন না। গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে একই চিত্র। ভুকশিমইল ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত  চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের কাছে কোনো সরকারি ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছায়নি। শুধু ভুকশিমইল ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন জীবন যাপন করছেন। তার মধ্যে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। এসব মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে। ঈদ আনন্দ তাদের কাছে গৌণ।

সর্বশেষ খবর