শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘পাটের দাম দিয়া শেখের বেটি ভালা কাম করছে’

সাইফুল আলম তুহিন, কুড়িগ্রাম

‘পাটের দাম দিয়া শেখের বেটি ভালা কাম করছে’

কুড়িগ্রামে পাটের হাটে হাস্যোজ্জ্বল কৃষক —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘এইবার ১৮০০ ট্যাহা মণ পাট বেচছি। চার মণ পাট আনছিলাম,  বেইচা ভালা নাগতিছে। পাটের দাম দিয়া শেখের বেটি ভালা কাম করছে।’ পাটের দাম নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে এভাবেই কথা বলছিলেন কৃষক আমির হোসেন (৬০)। গতকাল রাজীবপুর বাজারে পাট হাটে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ কইরছি। পাট ভালা অইছে দামও ভালা। পাট বেইছা যে ট্যাহা হইব তাই দিয়া আগে জামাই খাওয়ামু। আমির হোসেনের বাড়ি রাজীবপুর উপজেলার জাউনিয়ারচর গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক আমির হোসেনের তিন মেয়ে ও তিন  ছেলে। মেয়েদের ও দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। জমাজমিও আছে ৩ একরের মতো। পাট বাজার ঘুরে দেখা যায় আমির হোসেনের মতো পাট বেচে সব কৃষকের মনে খুশি খুশি ভাব। ব্রহ্মপুত্র বিচ্ছিন্ন চর থেকে পাট বিক্রি করতে হাটে আসছেন আয়নাল হক (৬৫)।  তিনি বলেন, ‘ভ্যান গাড়ি থাইক্যা পাট নামাবার পারি নাই। আগেই ব্যাপারি নিয়া গ্যাছে। ১৭৮০ ট্যাহা মণে দুই মণ বেচছি। এইবার পাট হাটে দেরি করবার নাগে নাই। এই ট্যাহায় বউ’র কাপড়, বাচ্চাকাচ্চাদের জামাকাপড় আর জুতাও কিনুম।’ বাজারে পাটের চাহিদা ও দাম থাকায় অনেক বছর পর ঘরে ঘরে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন দেখা দিয়েছে। কৃষক এখন ব্যস্ত পাট নিয়ে। পাট জাগের পানির গন্ধ এখন চারদিকে। পাটের আঁশ ছাড়ানো শুকানোর আমেজে মেতে উঠেছে কৃষাণ-কৃষাণিরা।  ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পাট নিয়ে চলে যাচ্ছে বাজারে। আবহমান বাংলার এ দৃশ্য এখন  রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার সব জায়গায়। উপজেলার টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের সেকান আলী (৫৬) বলেন, ‘এবার আমি ১০০ মণ পাট বেচব। যার দাম হবে পৌনে দুই লাখ টাকার মতো। আমার এই বয়সে এত বেশি টাকার পাট বেচতে পারি নাই। শেখ হাসিনা পাটের দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো কৃষকের উপকার করেছেন।’ সপ্তাহে তিন দিন হাট বসে রাজীবপুর উপজেলায়।রাজীবপুর বাজারের কাপড় দোকানি লতিফ বিশ্বাস বলেন, হাটের দিন মধ্যরাতের পর আর ঘুমানো যায় না। কৃষক পাট বেচে চলে আসে কাপড় কিনতে তাই আমাদেরও ভোরে দোকান খুলতে হয়। জুতা, জিলাপির দোকান থেকে শুরু করে সব ধরনের বাজার বসে জমজমাট ভাবে। এসব কিছুই হচ্ছে পাটের দাম বেশি হওয়ার কারণে। রাজীবপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মতিউর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত পাটের বাজারমূল্য ভালো। আমরা ১৯০০ টাকা মণ পাট কিনছি।

সর্বশেষ খবর